নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ, এবার ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষা

চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্প

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। প্রাথমিক পর্যায়ে দশ তলা ফাউন্ডেশনে (ভিত্তিতে) হাসপাতালের মূল ভবনটি গড়ে তোলার কথা বলা হলেও সেটি আরো বর্ধিত করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনাতেই হাসপাতালের মূল ভবনের নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ আজাদীকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থাপত্য অধিদপ্তর নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে জানিয়ে প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, নকশার কাজ শেষ করে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কাছেও নকশার একটি কপি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো সেটি আমরা হাতে পাইনি। নকশা হাতে পেলে আমরা ভূমির
সয়েল টেস্টটা করতে পারবো। একই সাথে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলবে। এর আগে ২০২০ সালের শুরুর দিকে হাসপাতালটির জন্য চিহ্নিত জমি অধিগ্রহণে জেলাপ্রশাসনকে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এখন স্থাপত্য বিভাগ কর্তৃক নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ায় চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য, নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের (সিভিল সার্জন) সেটি পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, নকশাটি স্বাস্থ্য বিভাগ পর্যালোচনা করবে। তাতে কোনো বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন হলে সেটিও করা যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেটি দেখবেন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত নকশা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
গণপূর্তের তথ্যানুযায়ী, মূল ভবনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় রাস্তার লে-আউট ও ল্যান্ড স্কেপিং রেখে সাব স্টেশন ভবন এবং কিচেন ভবনও নির্মাণ হবে হাসপাতাল এলাকায়। তবে জায়গা স্বল্পতায় ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের ডরমেটরি হাসপাতাল এলাকায় হচ্ছে না। হাসপাতাল এলাকায় আলাদা ভাবে এ সব ডরমেটরি নির্মাণ করতে গেলে অন্তত তিন একর জমি প্রয়োজন বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু হাসপাতালটি স্থাপনের লক্ষ্যে চিহ্নিত স্থানে ভূমি পাওয়া গেছে দেড় একরেরও কম (প্রায় দেড় একর)।
যার কারণে অপরিহার্য স্থাপনা চিহ্নিত করে প্রস্তাবনা পাঠাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে এ সব ডরমেটরি সম্ভব হলে বহুতল ভবনের উপরের কয়েকটি তলায় করার প্রস্তাব দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। বিকল্প হিসেবে প্রাথমিক ভাবে ডরমেটরি বাদ দিয়ে হলেও মূল হাসপাতাল ভবন সহ অপরিহার্য স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরো জমি অধিগ্রহণ সাপেক্ষে এ সব ডরমেটরি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলেও অভিমত দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। তবে সর্বশেষ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের পাশেই বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির ডাক্তার-নার্স ও স্টাফদের ডরমেটরি বা আবাসিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানান গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বিশেষায়িত হাসপাতালটি স্থাপনে চিহ্নিত জমি ব্যবহারের (অধিগ্রহণের) ক্ষেত্রে অনাপত্তির কথা জানায় সিডিএ। যদিও প্রত্যাশিত দুই একরের স্থলে কাঁটছাঁট করে প্রায় দেড় একর জমিতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। সিডিএ’র ছাড়পত্র পাওয়ার পর বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে অবহিত করে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর প্রেক্ষিতে ছাড়পত্র পাওয়া ওই জমিতে বিশেষায়িত হাসপাতালটি স্থাপনে মতামত চেয়ে স্থাপত্য বিভাগের কাছে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। জমির পরিমাণ কম হলেও হাসপাতালটি স্থাপনে স্থাপত্য বিভাগের অনাপত্তি পাওয়া গেছে বলে ওই সময় নিশ্চিত করেন গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান।
আর স্থাপত্য বিভাগের অনাপত্তি পাওয়ার পর চিহ্নিত জমি অধিগ্রহণে জেলাপ্রশাসনকে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল স্থাপনে ২০১৭ সালের ১৪ মে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক অপারেশন প্ল্যানের আওতায় এ হাসপাতাল স্থাপনে ৩০ কোটি (৩০০০ লাখ) টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুবিভাগ কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ অধিশাখা। নির্মাণ অধিশাখার তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের স্বাক্ষরে ওই বছরের (২০১৭ সালের) ১০ সেপ্টেম্বর চিঠিটি ইস্যু করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের দেড় বছরেও বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি স্থাপনে জমির সংস্থান করা যায়নি চট্টগ্রামে। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুজির পর ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাকলিয়া মৌজার (নতুন ব্রিজের পার্শ্ববর্তী) একটি জায়গা চিহ্নিত করে জেলাপ্রশাসন। ওই জায়গায় মোট দুই একর খাস জমি হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত করা হয়। যদিও সেখানে অল্প পরিমাণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও ছিল। তবে তা খুবই সামান্য পরিমাণ। জায়গা চিহ্নিত করার পর বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। পরে এ জায়গাতে হাসপাতালটি স্থাপনে সম্মতিও দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পর অনুমোদন পেতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দ্বারস্থ হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর আগে জেলাপ্রশাসন-মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালিতেও অনেকটা সময় কেটে যায়। তবে ওই জায়গাতে হাসপাতাল স্থাপনে প্রথম দফায় অনুমোদন দেয়নি সিডিএ।
হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত নগরীর বাকলিয়া মৌজার (নতুন ব্রিজের পাশ্ববর্তী) দুই একর খাস জমির মধ্যে কিছু অংশ রাস্তার অ্যালাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বলে জানিয়েছিল সিডিএ। যার কারণে ওই জায়গায় হাসপাতাল স্থাপনে অনুমোদন দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় ‘জমি পেলেও মেলেনি সিডিএ’র অনুমোদন, ঝুলে গেলো ফের/ ২’শ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিনই (২৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিয়ে সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী’র সাথে আলোচনা করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। চিহ্নিত জায়গায় নির্ধারিত রাস্তা বাদ দিয়ে বাকি জমিতে হাসপাতালটি স্থাপনের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয় বলে জানান সিভিল সার্জন। নির্ধারিত এলাইনমেন্ট বাদ দিলে প্রস্তাবিত জায়গার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় একরে। জমির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও (দুই একরের স্থলে দেড় একর) ওই পরিমাণ জমিতে হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন সিভিল সার্জন। জমির পরিমাণ কম হলেও তাতে হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মৌখিক সম্মতি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর ‘২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্প/কম জমিতেও হাসপাতাল স্থাপনে রাজি মন্ত্রণালয়’ শিরোনামে দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই বছরের (২০১৯ সালের) ৬ নভেম্বর নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে চিহ্নিত জমি ব্যবহারের (অধিগ্রহণের) ক্ষেত্রে অনাপত্তির কথা জানায় সিডিএ। যদিও প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ বাদ দিয়ে অধিগ্রহণের পক্ষে ছাড়পত্র দেয় সংস্থাটি। সিডিএ’র অনাপত্তি সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়- ‘প্রস্তাবিত সাইটটি যেহেতু চউক বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ কানেক্টিং রোডের অধিগ্রহণকৃত অ্যালাইনমেন্ট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেহেতু উভয় সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক অ্যালাইনমেন্টের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা বাদ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ছাড়পত্র শুধু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রযোজ্য জানিয়ে পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ পূর্বক চউক হতে বিধি মোতাবেক অনুমোদন নিতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে সরকারি সংস্থাটি (সিডিএ)।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। আর বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ইতোমধ্যে মেয়াদ পার হলেও বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটির নির্মাণ কাজও শুরু করা যায়নি। অনেকটা ধীরে-তালেই চলছে এ প্রকল্পের কাজ। জানতে চাইলে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহতে পারে সাত চুক্তি-সমঝোতা
পরবর্তী নিবন্ধ৬৩ বছরে আজাদী