নকশা প্রণয়নের কাজ শীঘ্রই শুরু

চূড়ান্ত হওয়া স্থান পরিদর্শনে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ স্থাপনে চূড়ান্ত হওয়া স্থান পরিদর্শন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল কাদের ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের নির্বাহী স্থপতি মোহছেনা সিদ্দিকাসহ প্রতিনিধি দলটি চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোয়াছি বাগান এলাকার এ স্থান পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ প্রফেসর সাহেনা আক্তার ও চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ (১)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহসহ অন্যরা এ সময় সাথে ছিলেন।
এর আগে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজের জন্য চমেক ক্যাম্পাসের গোয়াছি বাগান এলাকার স্থানটি প্রস্তাব করা হয়। ওই এলাকায় বর্তমানে স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে ৬টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ভবন কয়েক বছর আগে থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা। এর বাইরে ওই এলাকায় প্রচুর সংখ্যক ঝুপড়ি ও কাঁচাঘর তুলে থাকছেন হাসপাতাল ও কলেজের কর্মচারীরা। অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ঘর অনেকে আবার ভাড়াও দিচ্ছেন। কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ কাঁচাঘর গড়ে তোলা হয়েছে বলে চমেক ও চমেক হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার ৩ একর জায়গা জুড়ে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজটি গড়ে তোলা হবে। প্রস্তাবনায় কলেজটির নাম রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজ। ২০১৮ সালের ২৮ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে কলেজটির জন্য স্থান চূড়ান্তের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তৎকালীন সচিব ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মাসুম হাবিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ডা. হুমায়ুন কবির বুলবুল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগে চমেক ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রুপান্তরের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল প্রস্তাবিত স্থান পরির্দশনে আসে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। ৬ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি পরিদর্শন কমিটির আহ্বায়ক। এছাড়া সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কাশেম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (ডেন্টাল), মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা অধিশাখার (২) উপ-সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডেন্টাল) প্রতিনিধি দলে ছিলেন। এর বাইরে তৎকালীন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, চমেক হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন ও চমেক ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান ডা. আনোয়ার পারভেজ প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন।
চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরকরণের বিষয়ে গঠিত পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সার্বিক করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ২৮ জুন বৈঠক আহ্বান করে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব হিসেবে শেষ কর্মদিবসে ফয়েজ আহমদ ওই দিন (২৮ জুন) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি চূড়ান্ত করা হয় বৈঠকে।
বৈঠকে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ডা. হুমায়ুন কবির বুলবুল ও তৎকালীন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের স্থান চূড়ান্ত হওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেন।
একই সাথে রাজশাহীতেও পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজের স্থান চূড়ান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়ে ওই সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, এতদিন কেবল ঢাকাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ছিল। বাকি সব জায়গায় ছিল ডেন্টাল ইউনিট। এখন চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। শিক্ষকসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটগুলোকেও পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজে রূপান্তরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলেও জানান তিনি।

পরির্দশন কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গোয়াছি বাগান এলাকায় ডেন্টাল কলেজটি স্থাপনের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে তৎকালীন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ওই এলাকায় থাকা পরিবারগুলোর আবাসনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রতিবেদনে নোট দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বসবাসরতদের বিকল্প জায়গায় সরিয়ে সেখানকার ৩ একর জায়গাজুড়ে কলেজটি স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থান চূড়ান্ত হওয়ায় কলেজটি স্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে ওই সময় মন্তব্য করেন তিনি।
শীঘ্রই নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু : গতকাল প্রতিনিধি দলের স্থান পরিদর্শনের বিষয়ে চমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থানটি আগে পরিদর্শন করলেও সেটি অনেক দিন হয়ে গেছে। তাই সর্বশেষ অবস্থা ও চূড়ান্তভাবে যাচাইয়ে শনিবার আরেকটি টিম এসেছিল। তারা দেখে গেছেন।
পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজের জন্য কি কি অবকাঠামো প্রয়োজন এবং কোন কোন জায়গায় অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে, গতকাল পরিদর্শনকালীন এসব বিষয় যাচাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের সাথে থাকা চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের (১) নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/স্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে তথ্য দেবেন। এর ভিত্তিতে স্থাপত্য অধিদপ্তর এখন নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রূপান্তরের পর পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজটির নাম হবে চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজ। এটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মতো পূর্ণাঙ্গ একটি কলেজ হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটকেও পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির নেতৃবৃন্দের দাবি, মেডিকেল কলেজ দুটিতে ২৯ বছর আগে (১৯৮৯ সালে) স্থাপন করা ডেন্টাল ইউনিটে এতদিন ধরে কোনো পদই ছিল না। ২০১৮ সালে দেশের ৮টি ডেন্টাল ইউনিটের জন্য (সরকারি মেডিকেল কলেজের) মোট ৬৫৬টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে (প্রতিটিতে) ৮২টি করে পদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তরের পর এর জনবল আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ডা. হুমায়ুন কবির বুলবুল। ডেন্টাল সোসাইটির দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেও দাবি তার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৌদি যাওয়া হল না শফিকুলের
পরবর্তী নিবন্ধনিখোঁজ সেই দুই বোনকে উদ্ধার