চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের অধীন দোহাজারী রেঞ্জের আওতাধীন ধোপাছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সেগুনসহ অসংখ্য গাছ কেটে নিয়েছে বনখেকোরা। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে চিহ্নিত বনখেকোরা সংরক্ষিত বনের গাছ কাটার সাথে যুক্ত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৩শ সিএফটি কাটা গাছ উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে বনবিভাগ দোহাজারী রেঞ্জ। গাছ কাটার ব্যাপারে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বন আইনে ৯টি মামলাও দায়ের করা হয়। তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ফলে বনখেকোরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে জানান স্থানীয়রা। তারা সুযোগ পেলেই সড়ক যোগাযোগের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সেগুনসহ বিভিন্ন মূল্যবান গাছ কেটে রাতের মধ্যে ট্রাকযোগে পাচার করছে বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার দুধপুকুরিয়া ও চন্দনাইশের ধোপাছড়িকে নিয়ে ‘দুধপুকুরিয়া–ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করা হয়। রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম এই তিন জেলার সীমানায় অবস্থিত মনোমুগ্ধকর একটি অভয়ারণ্য এটি। বাংলাদেশে একমাত্র ধোপাছড়ি ইউনিয়নেই রয়েছে দুটি বনবিট অফিস। দেশের সবচেয়ে বড় সেগুন বাগানও রয়েছে এই ইউনিয়নে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলের ৬ নং ওয়ার্ড রেকঘাটা ও ১ নং ওয়ার্ড গোলারপাহাড় এলাকা থেকেই সেগুনসহ বিভিন্ন গাছ কাটছে বনখেকোরা।
স্থানীয়রা জানান, বনের গাছ কাটার সাথে জড়িত রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরাও। এই মুহূর্তে চিহ্নিত এসব বনখেকোকে প্রতিরোধ ও গ্রেপ্তার করা না গেলে ভবিষ্যতে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়বে ধোপাছড়ির বনাঞ্চল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ছিকনছড়া সেগুন বাগান থেকে ২০টি, ১৯২৬ সালের সেগুন বাগান থেকে ৭/৮টি, শান্তির বাজার শামুকছড়ি রোডের পাশ থেকে প্রায় ২০টির অধিক সেগুন গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
বনবিভাগ দোহাজারী রেঞ্জের রেঞ্জার মো. রেজাউল করিম বলেন, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর লোক ধোপাছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা সফল হয়নি। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ধোপাছড়ি বনবিটের আওতায় ৭টি এবং সাঙ্গু বনবিটের আওতায় ২টিসহ মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পাহাড় কাটা ও জবর দখলের দায়ে করা হয়। বর্তমানে গাছ কাটার বিরুদ্ধে বনবিভাগের কর্মীরা তৎপর রয়েছেন। গাছ কাটার খবর পেলেই তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হচ্ছে এবং গাছ কাটার নমুনা পেলেই মামলা করা হচ্ছে।