ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন

রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন ।। মার্কেটের গলি সরু হওয়ায় ঠিকমতো উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি : ফায়ার সার্ভিস | শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:০৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে গভীর রাতে একটি মার্কেট ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও দুইজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৪০ মিনিটে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মোহাম্মদীয়া প্লাজা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ব্রাদার্স টেলিকম নামের একটি দোকান থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, লামারবাজার, নন্দনকানন ও চন্দনপুরা স্টেশনের ৮টি ইউনিট ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। নিহতরা হলেন সাতকানিয়া উপজেলার মো. সাহেদ মিয়া (১৮), একই উপজেলার মো. ইকবাল (১৯) ও মো. রিদুয়ান (৪৫)

নগরীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র রিয়াজউদ্দিন বাজার গড়ে উঠেছে কয়েক বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে। যেখানে রয়েছে ছোটবড় শতাধিক মার্কেট, যেগুলো একটি লাগোয়া আরেকটির সঙ্গে। এখানকার মার্কেটের ভেতরের রাস্তাগুলো খুব সরু। মোট ১১০টি মার্কেট আছে। এর মধ্যে দুটি মোহাম্মদীয়া প্লাজা ও রেজোয়ান কমপ্লেক্স।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে তামাকুমন্ডি লেইনের ৮ তলা বিশিষ্ট মোহাম্মদীয়া কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তা পাশের রেজোয়ান মার্কেটেও ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটটিতে সিঁড়ি একটিই ছিল। দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর ওই সিঁড়ি দিয়ে কেউ বের হতে পারেননি। পরে ধোঁয়ায় ওপরের মেসে থাকা কর্মচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুক্রবার মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ, তাই আগের দিন রাতে তেমন লোকজন না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। তাঁরা আরও জানান, মার্কেটটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় মোবাইল এক্সেসরিজ, তৃতীয় তলা থেকে অফিস, গুদাম ও মেস আছে। বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরা ওই মেসে থাকতেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে একজনের (সাহেদ) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুজন (ইকবাল ও রিদুয়ান) মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে মার্কেটের গলি সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস ঠিকমতো উদ্ধার অভিযান চালাতে পারেনি, এমনটা জানান তিনি। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুন লাগার কারণ আপাতত মনে হচ্ছে শর্টসার্কিট। ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নুরুল আলম আশেক বলেন, হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তারা মারা গেছেন। এছাড়া ধোঁয়ায় অসুস্থ দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতরা হলেন, যশোরের মনিরামপুর এলাকার মোহাম্মদ আনিছুর রহমানের শিশু কন্যা জান্তাতুল আক্তার হাজেরা ও স্ত্রী মেরিনা পারভীন।

নিহতদের নামাজে জানাজা শুক্রবার বিকেল চারটায় নগরীর চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম৯ আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেইসঙ্গে এ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবার ও অগ্নিদগ্ধদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন শিক্ষামন্ত্রী। এক শোকবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সেই জন্য তিনি প্রশাসন, ব্যবসায়ী সমিতি ও কর্মচারীদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। এ সময় তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

রিয়াজউদ্দিন বাজার তামাকুমন্ডি লেইনে মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের দেখতে চমেক হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। শুক্রবার সকালে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের সমবেদনা জানান মেয়র। এসময় তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ জরুরি ভিত্তিতে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং চিকিৎসাধীনদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। মেয়র নিহতদের জন্য শোক জানান এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

হতাহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা জেলা প্রশাসনের : এদিকে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে চিকিৎসা সহায়তা ও নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে এ সহায়তা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল একটি মার্কেট। সেখানে মানুষ কীভাবে বসবাস করে; এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখব। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা বসব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষের রোমাঞ্চের অপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রম খোলা থাকবে আজ