নগরজুড়ে চলছে ধুলোবালির মহোৎসব। গতকাল বুধবার দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘ধুলোবালির অসহনীয় যন্ত্রণা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে গত মঙ্গলবার সকাল ৭টায় বাতাসের মানদণ্ড রিপোর্ট তথা একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) সূচক ছিল ১৬৫, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত। শূন্য থেকে ৫০ হলে বাতাসের মান ভালো। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত হলে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আবার গত রাত ৯টায় বাতাসের একিউআই সূচক ছিল ৭৮। অর্থাৎ রাতেও বাতাসের মান ভালো ছিল না।একিউআই সূচক পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়, নগরের বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ এমনিতেই বেশি থাকে। তাছাড়া বায়ুপ্রবাহ বেশি থাকলে ধূলিকণা এবং গাড়ি ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে বাতাসের মানমাত্রা খারাপ হয়। জানা গেছে, নগরে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ একাধিক উন্নয়ন কাজ এবং ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য শহরের বিভিন্ন রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। সেখান থেকেই বাড়ছে ধুলোবালি।
এদিকে নগরবাসী বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত ধুলোর কারণে পথ চলতে সমস্যা হচ্ছে। বিঘ্ন ঘটছে স্বাভাবিক চলাফেরায়। ধুলোবালি বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে দূষণের মাত্রা আরো বাড়বে। বাড়বে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। এদিকে ধুলোবালি বাড়লেও নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার না করার অভিযোগ আছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বিরুদ্ধে। এছাড়া সংস্থাটির পানি ছিটানো কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সংবাদে আরো বলা হয়েছে, টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ধুলোবালির জন্য সামনের গাড়িও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। এছাড়া আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, মেরিনার্স সড়ক, অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর সড়ক, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক, কাজীর দেউড়ি থেকে জামালখান পর্যন্ত ধুলোর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল পথচারীরা। এসব সড়কের পাশে বাসা-বাড়ির বাসিন্দারাও ধুলোর জন্য ভোগান্তিতে পড়েন।
আসলে চট্টগ্রাম মহানগরীর নাগরিকরা নানা রকমের দূষণের শিকার। তাঁরা জানেন, তাঁরা নিজেরা এবং তাঁদের সন্তানরা এই দূষণের কারণে এক ধীর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীতে এমন অনেক উপাদান ও পদ্ধতি বিদ্যমান, যেগুলোর সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় নগরীর আবহাওয়া ক্রমশ দূষিত হচ্ছে। যে সব উপাদান বা পদ্ধতি পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সংকীর্ণ সড়ক, যানজট, মোটরযানে নিম্নমানের অথবা মবিলমিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহার, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পুরনো মোটরযানের অবাধ চলাচল, ঠাসাঠাসি যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা, খোলা ট্রাকে মাটি বালি-আবর্জনা-কয়লা বা সিমেন্ট পরিবহন, পুরনো লক্কড় ঝক্করমার্কা শিল্প কারখানা, শহরের আশেপাশে ইটের ভাটা, খোলা জায়গায় বর্জ্য-আবর্জনা পড়ে থাকা প্রভৃতি। এছাড়া আরও কিছু উপাদান নগরীর বাতাসকে ভারী করে। যেমন : আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া, সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করা, অব্যবস্থাপনার কারণে কঠিন বর্জ্য ফেলার স্থাপনাগুলোতে আবর্জনা খোলা অবস্থায় পচতে থাকা, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং তা থেকে ধুলো ময়লা কাদা সৃষ্টি, খোলা জায়গায় নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, খোলা পয়ঃপ্রণালী ও নর্দমা, খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ, কাঁচা বাজারের পচনশীল বর্জ্য এবং উন্মুক্ত জায়গায় গরু-ছাগল জবাই-তার থেকে রক্ত যত্রতত্র ছিটিয়ে পড়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। দূষণ জনিত মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বায়ু দূষণের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। তাই ধূলাবালি থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, যেখানে উন্নয়ন কাজ চলছে, সেখানে হয়তো ধূলাবালির প্রকোপ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পুরো শহর ধূলায় আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। শব্দ ও বায়ু দূষণ কমানোর জন্য প্রথমেই প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বা দূষণের মাত্রা তদারকির জন্য একটি বোর্ড গঠন করা জরুরি। বিদ্যমান পরিবেশ আইনকে সামনে রেখে দূষণ সৃষ্টিতে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।