ধুঁকে ধুঁকে চলছে রেলের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ

৭৫ বছরের পুরনো এই ওয়ার্কশপে অনুমোদিত ২১শ জনবলের মধ্যে কর্মরত আছে মাত্র ৭শ জন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে নতুন বগি তৈরি করার মতো সব যন্ত্রপাতি ছিল, এখনো আছে। কিন্তু যন্ত্রপাতি থাকলে কি হবেএখন নেই অভিজ্ঞ জনবল। কাজ করার মতো অভিজ্ঞ জনবল কমতে কমতে রেলওয়ের ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী কারখানাটি ঐতিহ্য হারিয়ে এখন শুধু নামমাত্র উৎপাদনেই ঠিকে আছে। এই কারখানায় ২১শ’ জনবল থাকার কথা; অথচ বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র ৭শ’ জনবল। পুরো কারখানায় ২২টি শপের মধ্যে প্রায়ই বন্ধ। জনবল সংকটের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বাজেট না থাকায় অনেকটা ধুঁকে ধুঁকে চলছে রেলওয়ের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপটি। ২১শ’ জনবলের বিপরীতে এই কারখানায় কর্মরত মাত্র সাড়ে ৭শ’ জন। এদিকে আগামী এক বছরেই অন্তত আরও ২শ’ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক কারখানা থেকে অবসরে যাবেন। এ অবস্থায় দক্ষ জনশক্তি হারিয়ে ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই রেল কারখানা চালু রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বরাদ্দের মাত্র ৩০ শতাংশ লোকবল নিয়ে কাজ করছে ওয়ার্কশপটি।

এই ব্যাপারে পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ আমীর উদ্দিন আজাদীকে জানান, রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারখানা। এই কারখানায় ট্রেনের বগি মেরামত থেকে শুরু করে রঙের এবং স্টিলের সব কাজ হয়ে থাকে। এখানে কাজের যে রকম চাপ সে রকম লোকবল নেই। পাহাড়তলী কারখানায় অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ২ হাজার ১০০ জন। অথচ এখন আছে মাত্র ৭০০জন। কর্তৃপক্ষ শুধু ট্রেন বাড়ানোর কথা বলে; কারখানায় লোকবল বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। এখানে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি মেরামত করা হয়। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ কারখানাকে আধুনিকায়নের প্রতি কর্তৃপক্ষের তেমন নজর নেই।

কারখানার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলের আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের ইঞ্জিনের পাশাপাশি বগি মেরামতের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ। জরাজীর্ণ এবং চলাচল অনুপযোগী ইঞ্জিন ও বগি মেরামত করে পুনরায় চলাচলের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে শুরু থেকে সুনাম ছিল এই কারখানার। কিন্তু কালক্রমে নানা সংকটে পড়ে সেই সুনাম এখন অস্তমিত সূর্যের মতোই। বিশেষ করে প্রতি বছর এ কারখানা থেকে দক্ষ শ্রমিক তাদের কর্মজীবন শেষ করে অবসরে গেলে, সেই পদ পূরণে আর নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় না। বর্তমানে বরাদ্দের মাত্র ৩০ শতাংশ লোকবল নিয়ে কাজ করছে সরকারি এই কারখানা। সেই সঙ্গে বাজেট স্বল্পতায় কেনা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কারখানার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানান, প্রতিবছর কারখানার জন্য যে বরাদ্দ চাওয়া হয়, তার চার ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ মেলে না এই কারখানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিস্ত্রি জানান, প্রতি মাসেই এই কারখানার অভিজ্ঞ শ্রমিকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন। যারা যাচ্ছেনতাদের স্থলে নতুন অভিজ্ঞ শ্রমিক আসছে না। এর ফলে পুরো কারখানা জনবল শূন্য হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় একেবারেই কারখানা বন্ধ হয়ে পড়বে।

৭৫ বছরের পুরাতন এই কারখানার ৯৫ শতাংশ কাজেই মান্ধাতা আমলের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। অথচ সামপ্রতিক রেলওয়ের বহরে যুক্ত হচ্ছে আধুনিক বগি এবং ইঞ্জিন। যা মেরামতে প্রয়োজন যুগোপযোগী মেশিন। চট্টগ্রাম পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের হুইল শপের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের কাজের চাপ বেশি। তা ছাড়া আমাদের আরও আধুনিক মেশিনও প্রয়োজন। প্রতি মাসে এই ওয়ার্কশপ থেকে গড়ে ২৫টি বগি প্রয়োজনীয় মেরামত শেষে বহরে যুক্ত করা হয়।

সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য কারখানা জুড়ে পুরনো বগি মেরামতে শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এছাড়াও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনগুলো এই কারখানায় মেরামত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির বি ও ডি ইউনিটের শর্টলিস্ট ও সাক্ষাৎকার স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম রেল স্টেশনে শান্টিং ইঞ্জিনে আগুন