দেশের কৃষি সেক্টরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামের দুটি সার কারখানার একটি চললে অপরটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিইউএফএল চালু করার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায় ডিএপি সার কারখানা। ডিএপি সার কারখানা প্রতিষ্ঠা করার সময় কিছু বিষয়ে সিইউএফএলের ওপর নির্ভরশীল করে রাখায় এই পরিস্থিতি চলছে বছরের পর বছর ধরে। শুধু সিইউএফএলের ওপর নির্ভরশীলতা নয়, কাঁচামাল সংকটেও ডিএপি সার কারখানা ধুঁকছে বছরের পর বছর। গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ডিএপির দুই নম্বর ইউনিট। এক নম্বর ইউনিটও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। আগামী তিন দিনের মধ্যে সেই চলাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডাই–অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে এক সপ্তাহ ধরে সার উৎপাদন বন্ধ আছে। ফসফরিক অ্যাসিডের অভাবে উৎপাদন বন্ধ দেশের একমাত্র ডিএপি সার উৎপাদনকারী এই কারখানা।
জানা যায়, দেশের কৃষি সেক্টরের জন্য ডাই–অ্যামোনিয়া ফসফেট বা ডিএপি সার গুরুত্বপূর্ণ। নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সংবলিত এই যৌগিক সার ফলন বাড়ানোর জন্য কৃষকেরা ব্যবহার করেন। বছরে এই সারের প্রায় ১৬ লাখ টন চাহিদা থাকলেও আনোয়ারায় দেশের একমাত্র কারখানাটি গড়ে মাত্র ১ লাখ টন সার উৎপাদন করতে পারে। বাকি সার আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ডাই–অ্যামোনিয়া ফসফেট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল) নামে ২০০৬ সালে আনোয়ারায় এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারখানার দুটি ইউনিটে প্রতিদিন ৮শ টন করে ১৬শ টন সার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালেই এ কারখানাকে বেশ কিছু বিষয়ে সিইউএফএলের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়। সিইউএফএলের বয়লার ব্যবহার করে প্রাপ্ত স্টিম এবং পানিসহ ইউটিলিটি না পেলে ডিএপি সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকে। সিইউএফএল উৎপাদন বন্ধ রাখলে ইউটিলিটি পাওয়া যায়, কিন্তু সিইউএফএল চালু হলে ডিএপিকে দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের থাকে না। ফলে ডিএপি সার কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যায়। বহুদিন ধরে এভাবে চলতে গিয়ে ডিএপি সার কারখানা কখনো সক্ষমতার পুরোটা উৎপাদন করতে পারেনি।
সূত্র বলেছে, গত কয়েক বছর ধরে কাঁচামাল সংকটে ডিএপি সার কারখানা ধুঁকছে। অ্যামোনিয়া এবং ফসফরিক এসিড ডিএপি সারের প্রধান কাঁচামাল। এর মধ্যে অ্যামোনিয়া সিইউএফএল কিংবা কাফকো থেকে সংগ্রহ করতে কখনো সমস্যা না হলেও ফসফরিক এসিড সংগ্রহ করতে হিমশিম খায় কারখানাটি। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কারখানাটি ফসফরিক এসিড সংগ্রহ করে। আমেরিকা, মরক্কো, ভিয়েতনাম, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফসফরিক এসিড সরবরাহ দেন আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নেওয়া ঠিকাদাররা। কিন্তু বিসিআইসির অনুমোদনসহ অর্থের যোগান নিয়ে কারখানাটি কখনো সময়মতো এসিড পায় না। শুধুমাত্র এসিডের অভাবে কারখানাটির দুই নম্বর প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে দুই মাসের বেশি সময় ধরে। ১ নম্বর প্ল্যান্টও চলছে হিসেব করে। গতকাল কারখানার ট্যাংকে মাত্র ৫০০ টন এসিড ছিল জানিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এই এসিড দিয়ে সর্বোচ্চ তিন দিন কারখানাটি আংশিক উৎপাদন চালাতে পারবে। দৈনিক ১৬শ টন সক্ষমতার মধ্যে এক নম্বর প্ল্যান্টের ৮শ টনের মধ্যে কারখানাটি এসিডের অভাবে ৩শ টনের মতো উৎপাদন করছে।
কারখানার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদন সংকটের কারণে কারখানাটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছর কারখানাটিকে ১ লাখ ৩২ হাজার টন ডিএপি সার উৎপাদনের টার্গেট দেওয়া হয়। অথচ গতকাল পর্যন্ত এই কারখানা ডিএপি উৎপাদন করেছে মাত্র ২৮ হাজার ৭৬৬ টন। টার্গেটের মাত্র এক চতুর্থাংশ সার উৎপাদন করে কারখানা সংশ্লিষ্টরাও সন্তুষ্ট নন। এতে সারের উৎপাদন খরচ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারখানাটিতে ১০ হাজার টন সার উৎপাদন করলেও ফিঙড খরচ মাসিক ১২ কোটি টাকা, আবার ২ হাজার টন সার উৎপাদন করলেও খরচ সেই ১২ কোটি টাকা। কারখানা বন্ধ থাকলেও ৩৭৩ জন স্থায়ী এবং ১৯৫ জন অস্থায়ী শ্রমিকের বেতন–ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক খরচ চলতে থাকে। এছাড়া কারখানা বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এসিডে নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো পুনরায় চালু করতে গেলে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে থাকে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনতে হয়। এতে বিপুল অর্থ মেরামত এবং সংস্কারে খরচ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাঁচামালের সংকট আছে। এসিড ফুরিয়ে গেছে। বিষয়টি বিসিআইসিকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, বিসিআইসি থেকে নিশ্চয় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। কারখানার একটি ইউনিট বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অপর ইউনিটটির জন্য মাত্র তিন দিনের এসিড রয়েছে। এর মধ্যে এসিড না পৌঁছালে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না।