ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রেল হাব লিমান দখলের দাবি করার পর নিকটবর্তী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কেও রুশ বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। দনবাস অঞ্চলে একের পর এক শহর, গ্রাম হাতছাড়া হতে থাকা কিয়েভ যুদ্ধের গতিমুখ বদলে দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দূরপাল্লার অস্ত্র সহায়তা চাওয়া অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়া ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ইউক্রেনে তাদের ভাষায় বিশেষ সামরিক অভিযানে নামলেও শুরুর দিকে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। খবর বিডিনিউজের। ইউক্রেনীয় বাহিনীর তুমুল প্রতিরোধের মুখে তারা কিয়েভ দখলের আশা ছেড়ে দিয়ে পূর্বাঞ্চলের দনবাস অঞ্চলের দিকে মনোযোগ দেয়। সামপ্রতিক দিনগুলোতে সেখানে রুশ বাহিনী ও তাদের সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অগ্রগতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। ধীর–স্থিরভাবে এগুনো দখলদার বাহিনী দনবাসের লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় সব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। লুহানস্কের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে, তা মস্কোর জন্য বড় ধরনের বিজয় হিসেবে বিবেচিত হবে। ক্রেমলিন তার অভিযানের শুরুতে যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল দনবাস থেকে ইউক্রেনের বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, সেভেরস্কি দোনেৎস নদীর পশ্চিমে অবস্থিত লিমানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের সেনা ও মিত্রদের হাতে। তবে জেডএন ডট ইউএ ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী হান্না মালিয়ার লিমানে যুদ্ধ এখনও চলছে বলে দাবি করেছেন। লিমান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সেভেরস্কি দোনেৎসের পূর্ব পাশে অবস্থিত সেভেরোদোনেৎস্ক এখন পর্যন্ত ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের সবচেয়ে বড় শহর। সেভেরোদোনেৎস্কে শত্রুদের টানা গোলাবর্ষণ চলছে, শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছে ইউক্রেনের পুলিশ। রাশিয়ার কামানগুলো লিসিচানস্ক–বাখমুত সড়কেও গোলা ছুড়ে যাচ্ছে, ইউক্রেনের বাহিনীকে ঘিরে ফেলতে রুশ বাহিনীর জন্য এই সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জরুরি। লিসিচানস্কেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বলেছে পুলিশ।
রুশ বাহিনী এরই মধ্যে সেভেরোদোনেৎস্কে ঢুকে পড়েছে বলে শুক্রবারই জানিয়েছিলেন লুহানস্কের গভর্নর। ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের সেনারা শহরটি ছেড়ে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। শনিবার থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরটি ছাড়া শুরু করেছে কিনা, তা জানা যায়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী মিখাইলো পোদোলিয়াক শনিবার ফের মিত্রদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বানানো দূরপাল্লার মাল্টিপল–রকেট লঞ্চার চেয়েছেন। অনুরোধ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছিলেন। ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আক্রমণ হলে কোনো কিছু ছাড়া পাল্টা আক্রমণ কঠিন। আমরা রাশিয়াকে পাল্টা জবাব দিতে চাই, কিন্তু তার জন্য কার্যকর অস্ত্র লাগবে, টুইটারে বলেছেন পোদোলিয়াক। মিত্ররা শিগগিরই কিয়েভকে ভারি অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। কয়েক দিনের মধ্যে সুসংবাদ পাওয়ার আশাও করছেন তিনি।