নদী ভাঙন ঠেকাতে রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী ড্রেজিং প্রকল্পের বালি সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটা এলাকার স্থানীয়দের অনুরোধে তীর ঘেঁষে ফেললে বিস্তীর্ণ চর সৃষ্টি হয়। এটি পর্যটন স্পটের ন্যায় রূপ নিয়েছে। দূর দূরান্তের মানুষ এখানে বেড়াতে আসে।
কিন্তু সম্প্রতি চরটি দখলের উদ্দেশ্যে নানাভাবে ঘেরা দিতে শুরু করে কিছু দখলদার। এমনকি চরের সাথে শতবর্ষী একটি সড়কও দখল করা হয়েছে। দখলের অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উচ্ছেদে গ্রাম পুলিশ পাঠালে দখলদাররা তাদের মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চর দখল নিয়ে উত্তেজনা চলছে। সহিংসতারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের বালি সরফভাটার পুরাতন প্রাকৃতিক একটি চরের উপর ফেলতে চেয়েছিলেন দায়িত্বশীলরা। তবে সরফভাটার গুটিকয়েক ব্যক্তি এসব বালি প্রাকৃতিক সেই চরের উপর না ফেলে তীরের কাছে নদী ভাঙন প্রতিরোধক ব্লকে ফেলতে অনুরোধ করেন। বালিগুলো তাদের কথা অনুযায়ী নদীর তীর ঘেঁষে ফেলা হলে বিশাল চরের সৃষ্টি হয়। সেই চরের কথা প্রচার হলে তার সৌন্দর্য উপভোগে দূরদূরান্তের মানুষ আসতে থাকেন। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে ময়লা–আবর্জনা, মারামারি, ইভটিজিংসহ নানা কারণে পর্যটকশূন্য হয় চরটি। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় দখল প্রক্রিয়া। চরের সাথে সাথে দখল হতে থাকে শতবর্ষী একটি সড়কও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার অন্যতম প্রধান বাজার কানুরহাট দিয়ে শিলক–কোদালা ও পদুয়া যেতে সোলেমান মার্কেট থেকে পুরাতন মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়কটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সড়কটির একটি অংশ দখলে নিয়ে তার উপর টয়লেট স্থাপন করে এবং তার সাথে চরের একটি বড় অংশ দখলে নেওয়া হয়। এতে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে নদী ভাঙনে ইতিপূর্বে ভেঙে যাওয়া অংশে নতুন করে চর জেগে ওঠায় প্রতিদিন বাপ–দাদার পুরাতন বসতভিটার দাবিতে চর দখল ও ভাগাভাগি নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ১ অক্টোবর কিছু দখলদার চর দখল নিচ্ছেন–এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি তাদেরকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। চর দখল বন্ধ ও সহিংসতা রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চর দখলের ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ জমা হচ্ছে পরিষদে। উত্তেজনা বন্ধে বিভিন্ন সময় গ্রাম পুলিশের সাহায্যে চর ও রাস্তা দখল বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে এলেও দখলদাররা বেপরোয়া। তাই চর দখল বন্ধে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে আমি ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি অবহিত করছি। যারা এখনো দখল ছাড়েননি কিংবা চর ও রাস্তা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। চর দখলের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী বলেন, এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। ব্যক্তিগতভাবে কারো এভাবে দখল প্রক্রিয়া চালানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।