ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত : রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম দাবিদার

| শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬১৯৭১)। আইনজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। তাঁকে বলা হয় ভাষা আন্দোলনের প্রথম ভাষাসৈনিক। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে অধিবেশনের সব কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উত্থাপন করেন তিনি। তিনি ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন মুনসেফ কোর্টের সেরেস্তাদার। তিনি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে নবীনগর হাই স্কুল হতে প্রবেশিকা, ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা রিপন কলেজ হতে বি.এ এবং ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে একই কলেজ হতে বি.এল পরীক্ষা পাস করেন। তিনি প্রায় একবছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাঙ্গুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা হিতসাধনী সভা’র সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে বড় ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক যশ অর্জন করেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে তিনি মুক্তি সংঘ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন। কুমিল্লার অভয় আশ্রমএর কর্মকাণ্ডের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ছাড় আন্দোলনএ যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে কখনো বিনাশ্রম আবার কখনো সশ্রম দণ্ড ভোগ করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের পক্ষে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর পর্যন্ত আতাউর রহমান খানএর মন্ত্রিসভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ভারতপাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাঁকে গৃহবন্দি করা হয় এবং এর ফলে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে মার্চ রাতে পুত্র দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁদেরকে ময়নামতী সেনানিবাসে নিয়ে হত্যা করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধঈদের খুশি