ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

পরে বুলডোজার-ক্রেন দিয়ে ভাঙা শুরু

| বৃহস্পতিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

ভারতে পালিয়ে থাকা হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ধানমন্ডি৩২ নম্বরের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্রজনতা। বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিতে রাতে আনা হয়েছে বুলডোজারক্রেন। এমন এক দিনে এই ঘটনাপ্রবাহ চলছে, যেদিন গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্ণ হল। গতকাল বুধবার রাত ৮টার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে জড়ো হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেন অনেকে। কেউ কেউ বাড়ির দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেন।

এদিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এই পরিস্থিতি চলার মধ্যেই ধানমন্ডি ৫ এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেওয়া হয়। খুলনা নগরীর ময়লাপোঁতা এলাকায় ‘শেখ বাড়ি’ রাতের বেলায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি। এ ছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল রাতে ধানমন্ডি৩২ নম্বরে গিয়ে ছাত্রজনতাকে ভেতর থেকে ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই কর’ এসব স্লোগানের পাশাপাশি ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদমুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। এই ভিড়ের মধ্যে দর্শকের সংখ্যাও কম নয়। তারা বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছেন, মোবাইলে ছবি তুলছেন বা ভিডিও করছেন, আবার চলেও যাচ্ছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়। এসময় নারিকেল গাছের পাতাও জ্বলতে দেখা যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির পাশের একটি ভবনেও। কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা একজন বলেন, বুলডোজার দিয়ে আমরা আজ স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দেব।

ওই বাড়ি ঘিরে হাজার তিনেক মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বুলডোজারক্রেন পৌঁছায়। মানুষের উল্লাসধ্বনির মধ্যে সেটি মূল সড়ক থেকে ৩২ নম্বরের সড়কে ঢোকে। বুলডোজারের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকেন অনেকে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ৩২ নম্বর বাড়ির উল্টোপাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ আয়োজন করে। সেখানে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, আমরা আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র দেখাচ্ছি। আপনাদের যাদের ভাঙার আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চায়, তাদের সুযোগ দেন। এসব কর্মসূচির কারণে ধানমণ্ডি এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও রাস্তার ওপর দুটো পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হল বুধবার। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতে আছেন। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি। পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে’। এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন। একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন এই দুই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তাতে বলা হয়, হাজারো ছাত্রজনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪এর বিপ্লবী ছাত্র জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হচ্ছিল ছাত্র-জনতা
পরবর্তী নিবন্ধমন্ত্রণালয় কমিয়ে ২৫, পুরোনো চার বিভাগকে প্রদেশ করার সুপারিশ