নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ বসিয়ে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে আনা বিল পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০‘ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। খবর বিডিনিউজের।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে বিলটি ৮ নভেম্বর সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। সোমবার সেই ৫ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। ধর্ষিতা শব্দটি লিঙ্গ বৈষম্যের পরিচায়ক বলে বিভিন্ন সময় মত আসার প্রেক্ষাপটে বিলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দবন্ধ দিয়ে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। মূল আইনের ৯ (২) ধারাসহ কয়েক জায়গায় ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দটি বসছে।
দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার আইনটি সংশোধনের পদক্ষেপ নেয়। যদিও সামাজিক অবস্থা না বদলালে শাস্তি বাড়িয়েও কোনো লাভ হবে না বলেও মত রয়েছে। সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধিত আইন কার্যকর করতে গত ১৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০০০’ জারি করেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে পরে বিচারক পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছেন বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (গতকাল) পূর্ব নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর জামিন শুনানির দিন ধার্য্য ছিল। তবে এদিন আদালতে উনার পক্ষে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি করোনা ভাইরাস টেস্ট করিয়েছেন। পরে আদালতে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার পর আগামী ৮ ডিসেম্বর তার জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন বলে আদালত জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল ধার্য্য তারিখে চবি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর অসুস্থতা দেখিয়ে তার আইনজীবীরা জামিন শুনানির সময় চেয়ে আবেদন করেন। এসময় তারা আনোয়ার হোসেনের করোনো টেস্টের স্লিপ ও প্রেসক্রিপশন দাখিল করেন। তবে তিনি করোনো পজেটিভ কিনা তা এখনো জানা যায়নি।
বিদেশী জার্নালে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুটূক্তি ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে ২০১৮ সালে ২৪ জুলাই পাঁচলাইশ থানায় চবি শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ওই মামলায় গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে তিনি জামিন আবেদন করেন। পরে উচ্চ আদালত আসামির ৬ সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে আসামিকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। গত ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালতে আসামি আনোয়ার হোসেন আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। তবে এদিন কোনো শুনানি না হওয়ায় ১৭ নভেম্বর শুনানির তারিখ ধার্য্য করা হয়। এ সময় পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন বলে তখন আদালত জানিয়েছিলেন।
২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোস্যাল সায়েন্স জার্নালে ‘ধর্মীয় রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি; একটি চলমান সংকট’ শীর্ষক শিরোনামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু মুসলিমের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে উল্লেখের অভিযোগ উঠে আনোয়ারের লেখায়। এছাড়া প্রবন্ধটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে কোথাও বঙ্গবন্ধু শব্দটি উল্লেখ না থাকা, একেক জায়গায় একেক রকমের বানান, আওয়ামী লীগকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে উল্লেখ করার অভিযোগ উঠে। ২০১৮ সালে ৬ মে ওই প্রবন্ধের সূত্র ধরে একটি গণমাধ্যমে ‘মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিতর্কিত চবি শিক্ষক আনোয়ারের গবেষণায় বঙ্গবন্ধুকে কুটূক্তি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ১৭ মে মহানগর হাকিম আবুল সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে আসাদুজ্জামান তানভীর নামে ছাত্রলীগের এক কর্র্মী আনোয়ারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় আদালত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অভিযোগটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে নিতে পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশনা দেন। ওই বছরের ১ জুলাই (স্মারক নং-৪০৯৪) মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও দলটির প্রধানের নামে বিকৃত তথ্য ও মানহানিকর তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমোদনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ২৪ জুলাই পাঁচলাইশ থানায় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেয়া হয়। এ সময় দণ্ডবিধি ১২৩ (ক)/১২৪ (ক)/১৭৭/৫০০/৫০১/৫০২ ধারায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।