ধর্ষণের জন্য দায়ী নোংরা মানসিকতা

হাবিবুল হক বিপ্লব | রবিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণের কারণ হিসেবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই দায়ী করে নারীর পোশাককে। অবশ্য ধর্মান্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে এর থেকে বেশি কী বা আশা করা যায়। বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা এতটাই প্রকট যে ধর্ষণ আসলে কী সেটা না জেনেই মানুষ শুধুমাত্র পর্দার নির্দেশ অমান্য করার দায়ে ধর্ষণের দোষ চাপায় সেই ধর্ষিতা অসহায় নারীর উপরই। কিন্তু আমার জ্ঞান ও বিবেক বরাবরই বলে ধর্ষণের জন্য মানসিকতা দায়ী, পোশাক নয়। ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি একপ্রকার যৌন অত্যাচার। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অনুমতি ব্যতিরেকে যৌনাঙ্গের মিলন ঘটিয়ে বা না ঘটিয়ে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকে ধর্ষণ বলা হয়। এই সংজ্ঞা থেকে দুটি বিষয় লক্ষ্য করুন। ধর্ষণের সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে সঙ্গী বা সঙ্গিনীঅর্থাৎ শুধুমাত্র নারী নয় বরং নারী কর্তৃক পুরুষ এমনকি সমলিঙ্গের মানুষের মাঝেও ধর্ষণ হয়। বহির্বিশ্বে নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের ঘটনা অহরহই ঘটে। শুধু বহির্বিশ্বে নয়, ইদানিং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের খবর উঠে আসে। এখন কথা হচ্ছে নারী কর্তৃক পুরুষ যখন ধর্ষণ হয়, তখন ধর্মান্ধগণ কাকে দোষ দেবেন? পুরুষের পোশাককে নাকি ঐ নারীর মানসিকতাকে? যদি পোষাকই ধর্ষণের জন্য দায়ী হয়ে থাকে, তবে নিশ্চয়ই ধর্ষণ এড়াতে পুরুষকেও বোরখা পড়ে বাইরে বের হতে হবে!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯% ধর্ষণের ঘটনা ঘটে পুরুষ কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণের। একজন পুরুষ আর একজন পুরুষকে ধর্ষণ করে কী কারণে? পোশাকের শালীনতার অভাবে নাকি নোংরা মানসিকতার বদৌলতে!

সংজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অনুমতি ব্যতিরকে’ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার কথা। এখন একটু গভীরে ভাবুন, অনুমতি বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনতা কি শুধু রাস্তাঘাটে ঘটে, সময়ে অসময়ে বহু নারী নিজ আবাসেই এভাবে ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয়, যার খবর আমাদের পর্যন্ত কখনই পৌঁছায় না।

পোশাক নাকি মানসিকতা দায়ী, তার বিচার করতে হলে আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। আচ্ছা, বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা অনেক সময়ই উঠে আসে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, আরও বহু দেশে শিশু ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু শিশু ধর্ষণ হয় কেন? শিশুরা মিনি স্কার্ট পড়ে থাকে বলে? শিশু বাচ্চাদের দেখেও কী মনের মধ্যে কামনার সৃষ্টি হয়? আসলে নিজের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানিরা এবং রাজাকাররা যে হাজারো মাবোনকে ধর্ষণ করেছে, এ সব কি পোশাকের কারণে? সেসময়ে কি মেয়েরা তারা মিনি স্কার্ট পরে ঘুরে বেড়াতো?

পোশাকই যদি ধর্ষণের মূল কারণ হবে, তাহলে আরব দেশগুলোতে কেন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যেখানে সবাই বোরখা পরা? খারাপ মানসিকতা সৃষ্টির জন্য আপনি নারীর অর্ধনগ্ন পোশাককে দায়ী করছেন? তাহলে ইন্টারনেটে রেকর্ডতুল্য পর্নো সিনেমা কেন আরব দেশগুলো থেকে আসে?

তনুকে যখন ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো, তখনো বাংলাদেশের ধর্মান্ধরা অপপ্রচার চালিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলো যে তনুর ধর্ষণের জন্য তনুর পোশাকই দায়ী। কিন্তু তনুর ছবিগুলো তখন সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে সে বোরখা পরিহিতা ছিল। কতটা নির্লজ্জ মানসিকতা হলে একটি মৃত মেয়ের উপর মিথ্যে দোষ চাপানো যায় ভাবতে পারেন? কিংবা কিছু দিন আগে যে শিশুটি মসজিদের ভিতর ঈমাম দ্বারা ধর্ষিত হল তার কথাই বা কী বলবেন? এটাও কি পোশাকের দোষ?

ধর্মান্ধ হয়ে আপনি যতই বলুন পোশাক দায়ী ধর্ষণের জন্য, কিন্তু বাস্তব হলো মানসিকতা। বোরকা হলো নিজের অসঙ্গতিকে বস্তাবন্দি করার পোশাক। বাংলাদেশে পতিতারাও বোরকা পড়ে। তারা নিশ্চয়ই ধর্ষণ এড়াতে নয়, বরং বোরকার আড়ালে সুবিধার জন্য। এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে তার নিজের ইচ্ছেমত নিজেকে সাজানোর। আপনি নিশ্চয়ই আপনার নোংরা মানসিকতাকে বদ্ধ রাখতে আরেকজনের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। মনে রাখবেন, আপনি আপনার নোংরা মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে সমগ্র নারী জাতিকে বস্তাবন্দি করলেও ধর্ষণ বন্ধ হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজান আত্মশুদ্ধির এক মহা সুযোগ
পরবর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপের প্রধান সড়কগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও প্রশস্ত করা হোক