ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা জানি, চট্টগ্রামকে আপনি ভালোবাসেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আপনার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে। আপনার নেতৃত্বে, আপনার নির্দেশনায় গত প্রায় দেড় দশকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোরই কাজ শেষ হয়েছে। কিছু বাস্তবায়নাধীন। এগুলোর জন্য ব্যয় হয়েছে বা হচ্ছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। এসব প্রকল্পে এ এলাকার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। উন্নয়নে বদলে যাওয়া চট্টগ্রামে আপনাকে স্বাগতম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, চট্টগ্রামকে নিজের মতো করে ভাবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। চট্টগ্রামের অভাব-অভিযোগগুলো নিজের মনে করে সুরাহা করছেন আপনি। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বা হচ্ছে তা অতুলনীয়। দুঃসাহসী সব মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে আগ্রহ, ঐকান্তিকতায় আমরা কৃতজ্ঞ।
চট্টগ্রামের জন্য গৃহীত উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ, ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস রোড নির্মাণ, কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খালের মাথা পর্যন্ত বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ, মীরসরাইয়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে তোলা, বে টার্মিনাল নির্মাণ, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা।
সড়ক ও টানেল নির্মাণ, বন্দর নির্মাণসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পসহ দুই শতাধিক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়া এবং সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানসহ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে ১৯৮৮ সালে আপনার জীবন সংশয় তৈরি হয়েছিল। যেখানে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভাষণ দিয়েছিলেন। লালদীঘি মাঠের সাথে জড়িত আপনার আবেগ, সেখানে দাঁড়িয়ে আপনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য আপনি অকাতরে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম নগরীতে ফ্লাইওভার হবে, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে হবে, সংকীর্ণ রাস্তাগুলো প্রশস্ত হবে, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল হবে-এসব একসময় রূপকথা মনে হতো। কিন্তু শহরের বুকে একের পর এক ফ্লাইওভার হলো। কর্ণফুলীর তলদেশ টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে। সাগরপাড়ের চেহারা পাল্টে গেল। আউটার রিং রোড থেকে বঙ্গোপসাগরের ভাসমান নৌযান ‘বিদেশি ছবির’ মতো দৃশ্যমান হলো। একেকটি ‘রূপকথা’ এখন ‘দৃশ্যমান বাস্তবে’ পরিণত হলো আপনার জন্য।
চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সরাসরি জড়িত কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে খুব ভালোবাসেন। গত এক যুগে এই ভালোবাসার অনেক প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রামের কোনো প্রকল্প উপস্থাপিত হলে তা কোনোদিন ‘না’ হয় না। চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার কোটির বেশি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৩৭টি খালের উন্নয়ন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খাল খনন, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণসহ নানা কাজ চলছে। সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। বছর কয়েক আগে একটিও ফ্লাইওভার না থাকা এই শহরে একের পর এক ফ্লাইওভার হয়েছে, ওভারপাস হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কদমতলী ফ্লাইওভার এবং ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দেওয়ানহাট ওভারপাস নির্মিত হয়েছে।
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণ করায় পতেঙ্গা বিচসহ বিস্তৃত সাগরপাড়ের চেহারা পাল্টে গেছে। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ হয়ে অঙিজেন কুয়াইশ হয়ে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২১ কিলোমিটার নতুন সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ করে শহরের প্রথম বাইপাস সম্পন্ন করা হচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণ করে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে চট্টগ্রামকে। টানেলের কাছেই পারকি সৈকত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে আনোয়ারাসহ নদীর দক্ষিণ পাড়ের বিস্তৃত এলাকাকে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কঙবাজার ট্রেন যাবে-এমন কথা কেউ কল্পনাও করেনি। সেই কাজ এখন দৃশ্যমান। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে দোহাজারী-কঙবাজার-ঘুমধুম রেলপথ। বছরখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম-কঙবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে রাতে-দিনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি রেললাইন স্থাপিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিকে বিশেষ এই মেগা প্রকল্পের কাজ মাত্র ২৩ শতাংশ বাকি রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে কঙবাজারে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্য আছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, বে টার্মিনাল নির্মাণ এবং পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণসহ বন্দর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ দেশের আগামী একশ বছরের চাহিদা মেটাবে। মাতারবাড়ি ১২শ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শেখ হাসিনা-১ এবং শেখ হাসিনা-২ পানি শোধনাগার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, ভান্ডালজুরি পানি শোধনাগার, চট্টগ্রাম মহানগরীর স্যুয়ারেজ প্রকল্পসহ চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সুফল মিলতে শুরু করেছে। কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিশেষ করে বন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার কার্যক্রম চলছে।
এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আবাসন, শিল্পায়ন এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রামজুড়ে উন্নয়নের এই মহাযজ্ঞের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।