অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাব অনুমোদন হলে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেশি ধনী ব্যক্তিদের আরও বেশি কর দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সংসদে উপস্থাপিত অর্থ বিলে বলা হয়েছে, কোনো সম্পদশালী ব্যক্তির নিট সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে তার সম্পদের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ বা সম্পদ কর দিতে হবে। বিডিনিউজ
বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী সম্পদ করের বিদ্যমান স্তর সাতটি থেকে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন।
বর্তমানে নিট সম্পদের ওপর সর্বোচ্চ সারচার্জের হার ৩০%। এই হারে কর দিতে হয় নিট সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি টাকার বেশি হলে।
২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ৫০ কোটি বা এর অধিক সম্পদশালীদের নিট সম্পদের ওপর ০.১% হার অথবা প্রদেয় করের ৩০% এর মধ্যে যেটি বেশি সেই পরিমাণ সম্পদ কম দিতে হয়।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “প্রত্যক্ষ করের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো। আর্থিক অসমতা হ্রাসকরণের লক্ষ্যে বিত্তবানদের সম্পদেরভিত্তিতে আয়করের পাশাপাশি সারচার্জ আরোপের বিধান রয়েছে। সারচার্জ আহরণ এবং প্রয়োগ সহজীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান সাতটি ধাপের পরিবর্তে পাঁচটি ধাপের প্রস্তাব করছি।”
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “এছাড়াও আয় না থাকলে সম্পদের উপর সারচার্জ পরিশোধের বিধান বিলোপ করা ও ন্যুনতম সারচার্জ বিলোপের প্রস্তাব করছি। এর ফলে সারচার্জের বিধান পরিপালন করা সহজ হবে এবং মধ্যবিত্তের কর লাঘব হবে।”
অতি ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আরো রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর পরিকল্পনা থেকে সারচার্জ আরোপের পদক্ষেপের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থবিলে এই খাতের সাতটি স্তর পাঁচটিতে নামিয়ে কাঠামো পুনবিন্যাস করা হয়েছে।
বর্তমান অর্থবছরের মত একই থাকছে সারচার্জমুক্ত নিট সম্পদের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি টাকা পর্যন্ত হলে কোনো সারচার্জ দিতে হয় না।
নিট সম্পদের পরিমাণ তিন থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত এবং নিজ নামে একাধিক গাড়ি কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুটের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকলে থাকলে ন্যূনতম ১০% সারচার্জ ধরা হয়েছে।
বিদ্যমান বিধানে এই স্তরে সম্পদের মূল্যমান ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা হলে বা একাধিক মোটরগাড়ি থাকলে কিংবা যে কোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুটের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকলে সেই সম্পদশালীকে আয়করের ওপর ১০ শতাংশ সম্পদ কর দিতে হয়।
নতুন প্রস্তাবে এটি এবং নিট সম্পদের পরিমাণ ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে ১৫ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান থাকছে না।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, এর পরের স্তরে ১০ কোটি টাকার অধিক, কিন্তু ২০ টাকার বেশি না হলে ২০ শতাংশ সম্পদ কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে আগের ১০ থেকে ১৫ কোটি পর্যন্ত ২০ শতাংশের হার বাদ যাচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবে এর পরের ধাপে ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদশালীকে সারচার্জ দিতে হবে ৩০ শতাংশ।
বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সম্পদ করের বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সর্বশেষ স্তরে অর্থবিল অনুযায়ী, নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে।
চলতি বছরে একই পরিমাণ সম্পদের জন্য যা দশমিক ১ শতাংশ অথবা আয়করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সেই হিসাবে সম্পদ কর দিতে হয়।
অর্থবিলে বলা হয়েছে, নিট সম্পদের মূল্যমান বলতে আয়রক অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী, “পরিসম্পদ দায় ও খরচের বিবরণীতে প্রদশিত নিট পরিসম্পদের মূল্যমানকে বুঝাইবে।
সারচার্জ বা সম্পদ কর এমন এক ধরনের মাশুল, যা ব্যক্তিগত সম্পদের দলিলমূল্যের ওপর নির্ধারিত হয়। এ নিয়ে অবশ্য আপত্তিও রয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।
১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মত চালু সম্পদ কর স্বাধীনতার পরও সরকার অব্যাহত রাখে।
১৯৮৬ সালে সরকার অর্থ আইনের মাধ্যমে সারচার্জ ব্যবস্থা স্থায়ী করতে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন যুক্ত করে।
১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে তা তুলে নেওয়ার হয়। এরপর আবার ২০১১-১২ অর্থবছরে বর্তমান সরকার সম্পদ কর চালু করে।