দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সঙ্কট বাড়বে

| রবিবার , ৪ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ প্রতিদিনে লোকসান গুনছে ৪ কোটি টাকা। অন্তত ১৪ দিন। এ বিষয়ে গত ২ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে, ৩ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতির কারণে ১৪দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে কন্টেনারবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সিজিপিওয়াই থেকে দুটি কন্টেনারবাহী ট্রেন ঢাকায় কমলাপুর আইসিডির উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এছাড়া ৪টি তেলবাহী ট্রেনও চট্টগ্রামে থেকে ছেড়ে গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে দুটি কন্টেনারবাহী ট্রেন ঢাকায় কমলাপুর আইসিডির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া আরও দুটি ট্রেন কমলাপুর আইসিডি থেকে পণ্য অথবা খালি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। একটি ট্রেন প্রতিদিন চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে কন্টেনার লোডিংএ থাকে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি ট্রেন খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে সারাদেশে চলাচল করে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ। গত ১ আগস্ট থেকে শুধুমাত্র স্বল্প দূরত্বে মেইললোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এদিকে সড়ক যোগাযোগ এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু এখনো ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এ পথের যাত্রীদের যাতায়াত বিঘ্ন ঘটছে। রেলের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, সারাদেশে সবগুলো আন্তঃনগর, লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন মিলে প্রতিদিন ২ লাখ ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। শুধু যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল একদিন বন্ধ থাকলে অন্তত ৪ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলের বাণিজ্য বিভাগ। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৩ দিনে রেলে যাত্রীবাহী ট্রেনে টিকিটি বিক্রি বন্ধ থাকায় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ৫২ কোটি টাকার মতো। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী আজাদীকে বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বৃহস্পতিবার ( ১ আগস্ট) থেকে শুধু কারফিউ শিথিল সময়ে স্বল্প দূরত্বের মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালুর ব্যাপারে। তবে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সারাদেশে সবগুলো আন্তঃনগর, লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন মিলে প্রতিদিন ২ লাখ ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়।

আমাদের পাঠক মাত্রই অবগত যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। বলা চলে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই রেল খাতকে পুনর্জীবন দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বন্ধ রেলপথগুলো চালু করার পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। এক যুগ ধরে বরাদ্দও বাড়ছে। তবে যাত্রীসেবার কাঙ্ক্ষিত মান নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়ের তৈরি করা এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যাত্রীসেবার মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের রেল। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সমপ্রতি করা এক জরিপেও ৭২ শতাংশ যাত্রী রেলের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত দুই অর্থবছরে শুধু রেল পরিচালনায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাঞ্চল রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিলম্বে চলাচল যেন এসব ট্রেনের নিয়ম। ভিড়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। টয়লেট, ফ্যান ও আলোর স্বল্পতায় মেইল ট্রেনগুলোতে চলা বড় দায়। এছাড়া, বাস মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গাফিলতি করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে লোকসানের বোঝা। যদিও সেই অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে মনে করি না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রেলওয়ের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচের ওপর নির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপও দৃশ্যমান নয়। বস্তুত সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এসব খাতে অগ্রগতিও দৃশ্যমান নয়। যেসব দেশের রেলওয়ে স্বাবলম্বী, সেসব দেশে সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ খাতে গুরুত্ব না বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতটা লাভের মুখ দেখবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ন দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ।

যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে শুধু রেলের লোকসান নয়, আমাদের জনসাধারণেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই কোটা সংস্কার নিয়ে যে সহিংস আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার অবসান হওয়া দরকার। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সমস্যা বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে