অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই। সেটা রাজনৈতিকও না, প্রশাসনিকও না। কারোর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ নেই। এ ছাড়া, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে কোনো কমেপ্রামাইজও করব না। গত বুধবার বিকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত দেশের সার্বিক বাজার বা দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিবিষয়ক পর্যালোচনা সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে– এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক কোনো কিছু চাননি। ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে, পোর্টে কিছু সমস্যা আছে, তারা সেগুলোতে সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা বলেছি, তা নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংকে এলসি খোলায় জটিলতা আছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এলসি খোলা একদমই কমে যায়নি। কিছু ব্যাংকের সমস্যা আছে, বিদেশের ব্যাংকও যুক্ত আছে। এটার সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। ডলার সংকটে নিত্যপণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে না জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, জ্বালানি কিংবা খাদ্য কিছুই আটকে থাকছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে পারুক ম্যানেজ করছে। সামপ্রতিক বন্যায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে বন্যা হয়নি। সাময়িক অসুবিধা হলেও এখন সে সমস্যা আর নেই।
আসলে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক আগে থেকে, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে। সেই রেশ এখনো প্রবহমান। সারা দেশে বাজারে আগুন জ্বলছে। চাল–ডাল–সবজি, তেল, চিনি, পিঁয়াজ, আদা, রসুন থেকে শুরু করে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। দেশের বিপুল অংশের শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। গোটা বাজার আজ গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। আর এই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী নেতা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে অবিলম্বে এরা এই সুযোগ পায়। আমাদের দেশের বিভিন্ন সংস্থা আছে, তথ্য আছে। তাহলে কীভাবে সরকারের চেয়ে এরা বড় শক্তিশালী হয়– সেই প্রশ্ন অনেকের। যদি সিন্ডিকেটকে শক্ত হাতে দমন করা না হয়, তাহলে এরা পণ্যের দাম বাড়াবে। আগে কখনো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী হয়ে গেছে যে, তারা প্রতিদিন সকালে মোবাইলের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেয়। এরা সকালে এসএমএসের মাধ্যমে চিনির, ডিমের, মাংসের, তেলের, এমনকি তাজা শাক–সবজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে তারা এ সাহস পেতো না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘দেশে গত কয়েক বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে; তারপরও বাজারে অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। বর্তমানে কৃষকরা নিজেদের বাড়িতেই দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকেন। তাতে পণ্যটি নষ্ট হওয়ার হার বেশি। উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলে বাজারের অস্থিরতা দূর হবে কিনা, তা বলা মুশকিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে কৃষক ফসল ঘরে তোলার পরপরই তা বিক্রি করে দেন। কাজেই সারা দেশে পণ্যটি সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। মজুতদার–মুনাফাখোর ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে পর্যাপ্ত ন্যায্যমূল্যের দোকান ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
কাজেই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট শনাক্তে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ না পায়, তাও নিশ্চিত করা দরকার। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা যেভাবে সিন্ডিকেটের সাথে কোনো কমেপ্রামাইজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবে আমরা দৃঢ়তা চাই। আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।