দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। বেশ কিছুদিন থেকে সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন। মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ আছেন অনেক কষ্টে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর কথাও বারবার উঠে এসেছে এসব প্রতিবেদনে। এত সংবাদের পরও সিন্ডিকেট যেন দিন দিন বটগাছে রূপ নিচ্ছে। একদিকে সাধারণ মানুষের হা–হুতাশ বাড়ছে, অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে শুধুই অসাধু সিন্ডিকেটগুলো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধে প্রয়োজন কঠোর বাজার মনিটরিং। বিগত কয়েক মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়েছে।
এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন সবার কাছে সাধারণ ঘটনা। মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা হলেও বিপরীতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কাগজপত্রে বাড়লেও বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। বরং দিন দিন অনেকের কমে গেছে আয়ের পরিমাণ। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে। আমাদের দেশে সিন্ডিকেট একটি কমন বিষয়। এই কমন বিষয়টির কাছেই এক প্রকার জিম্মি বাজার, জিম্মি সাধারণ মানুষ।
কৃষক আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। এদের সহায়ক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী শ্রেণি। ব্যবসায়ী ও উৎপাদক শ্রেণি হচ্ছে অর্থনীতির সহযোগী শক্তি। এদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন। বিশেষ করে উৎপাদক শ্রেণির মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, তারা যে পণ্য উৎপাদন করবেন তার সঠিক ও ন্যায্যমূল্য পাবেন। কোনো সিন্ডিকেটের কাছে তাদের প্রাপ্য মূল্য চলে যাবে না। থাকবেন না জিম্মি হয়ে। আরো একটি বিষয় খুবই জরুরি। সেটা হলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। সারা বছরই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যারা বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষের সাবলীল সুন্দর জীবনযাপনের জন্য। কিন্তু একটি অসাধু সিন্ডিকেট বার বার সরকারকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা তেমন চোখে পড়ে না। তার ওপর বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল/ সিলিন্ডার খরচ, গাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা খরচ বিভিন্ন সেবা প্রাত্যহিক নানা খরচসহ জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট সব খরচও বেড়েছে কয়েক গুণ।
অতি দ্রুত সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে পণ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও মজুদদারি কঠোরভাবে দমন করতে হবে সারা দেশে। বাজার মনিটরিং জোরদার, অসম প্রতিযোগিতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, একক কোনো ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কাছে ব্যবসার বিশেষ সুবিধা আটকে না যাওয়া–এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক টু ভোক্তার একটি শক্তিশালী চেইন তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ, অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি ভাবা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়, সিন্ডিকেটে জড়িতদের লাইসেন্স বাতিল করে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানার বিধান নিশ্চিত করতে পারলেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগামে টান পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আর তাতে জনমনে আসতে পারে স্বস্তি। অন্যথায় সাধারণ মানুষ নীরবে কান্না করেই যাবে।