দ্বৈত নিয়ন্ত্রক কাঠামো, লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরে অসম প্রতিযোগিতা

এম শ্রেণীর ও সি শ্রেণীর জাহাজ পরিচালিত হচ্ছে ভিন্ন নিয়মে ।। একই রুটে চলাচলকারী সব জাহাজ অভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনার তাগিদ

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বৈত নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিরাপত্তা ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বড় ধরণের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধ্যাদেশ এবং ১৯৮৩ সালের বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশের আওতায় পরিচালিত দুটি ভিন্ন মান ব্যবস্থা লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরের একই বাজারে অস্বাভাবিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলেছেন, একই রুটে চলাচল করলেও ‘এম’ শ্রেণীর জাহাজ ও ‘সি’ শ্রেণীর জাহাজ ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। এতে জাহাজ পরিচালনা ব্যয়ে ঘটছে পার্থক্য। যা লাইটারেজ জাহাজ খাতে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, তুলনামূলকভাবে উন্নত নিরাপত্তা মান ও সক্ষমতা থাকার পরও ‘সি’ শ্রেণীর জাহাজের খরচ বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ফলে কার্গো পরিবহন প্রায় পুরোপুরিই নির্ভর করছে অপেক্ষাকৃত কম খরচে চলা ‘এম’ শ্রেণীর জাহাজের ওপর।

ব্যবসায়ীরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি কার্গো পরিবহন এরই প্রমাণ। প্রতি মাসে বন্দরে খালাস হওয়া ২৫৩০ লাখ টন বাল্ক কার্গোর প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবহন করছে নদীপথে চলা জাহাজ, যার সিংহভাগ বহন করছে ১৩ হাজারেরও বেশি ‘এম’ শ্রেণীর জাহাজ। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এ বহর জাতীয় সরবরাহ শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও নিরাপত্তা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান কাঠামো দীর্ঘমেয়াদে খাতটির স্থায়িত্বকে দুর্বল করবে। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক জাহাজের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিদ্যমান ব্যয় কাঠামো এসব জাহাজ নির্মাণসহ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। এতে ভবিষ্যতে সংকট তৈরিরও আশংকা রয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন। বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছে যে, একই রুটে চলাচলকারী সব জাহাজকে অভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনা সময়ের দাবি। তারা অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে সীমিত সংখ্যক বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেট চালু করার উপর জোর দিয়েছেন।

প্রতিটি জাহাজের জন্য তৃতীয় পক্ষের দায়বদ্ধতা বীমা নিশ্চিত করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরণের সমন্বিত সংস্কার বাস্তবায়ন করা গেলে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন খাত শুধু নিরাপদ ও প্রতিযোগিতামূলকই হবে না, বরং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদ জহির উদ্দীন বলেন, একইপথে একইভাবে একইকাজ করলেও শত শত জাহাজ এক অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে খরচের ব্যাপারে জাহাজগুলোতে সৃষ্টি হয় এক অসম প্রতিযোগিতা। এটাকে ঠিকঠাক করা না গেলে ভবিষ্যতে বড় ধরণের সংকট তৈরি হবে বলেও মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকন্টেনারের ওপর চারগুণ হারে স্টোর রেন্ট প্রত্যাহারের আহ্বান
পরবর্তী নিবন্ধনগরে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ