দীর্ঘ ১৫ বছর বাংলাদেশে আলেম ওলামাদের ওপর চরম জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার কারণে অতীতে অনেক নবীদের বিনা অপরাধে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ অসংখ্য আলেম ওলামাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার অপরাধে হত্যা বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। দেশের শতকরা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে আল্লাহর দ্বীন কায়েম হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি গতকাল শনিবার নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ওলামা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ওলামা–মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরী ও ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলারস ফোরামের (কাতার) কার্যকরী কমিটির সদস্য তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও কেন্দ্রীয় ওলামা কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, দ্বীনের বিজয়ের জন্য ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। তাদেরকে জাতির মিনার হিসেবে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর নবী ও সাহাবায়ে কেরামদের মত পাগলপারা হয়ে কাজ করতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আলেম–ওলামার মাঝে কোনো ভেদাভেদ থাকা যাবে না। কওমী–আলিয়ার মাঝে যে প্রাচীর রয়েছে তা উঠিয়ে দিতে হবে। ইমাম–খতীব, আলেম–ওলামা, কওমী–আলিয়া সবাই মিলে সর্বসাধারণের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত, ঐক্যের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। ছাত্র–জনতার ঐতিহাসিক বিজয়োত্তর আমাদের এই প্রিয় দেশকে সকল ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করে দ্বীন কায়েমে সচেষ্ট হতে হবে।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ইসলাম এই জমিনে পরাজিত হওয়ার জন্য আসেনি। ইসলামী আন্দোলনকে কখনই পরাজিত করা যাবে না। কারণ আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। নানামুখী অপপ্রচার, জুলুম, নির্যাতনের পরও ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে। এ দেশের মাটি ও মানুষের সাথে ইসলাম মিশে আছে। যতই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হোক না কেন, কোনো শক্তিই ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছর ইসলামের পক্ষে কথা বলার সুযোগ ছিল না। আলেম–ওলামারা কথা বলতে গেলেই কারাবরণ করতে হয়েছে। ব্রিটিশরাও ১৮৩ বছর ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, টিকে থাকতে পারেনি। ইসলামী শক্তিকে যতবেশি জুলুম–নির্যাতন করা হয়েছে ইসলাম ততটা শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। নিষিদ্ধ করে জামায়াতে ইসলামীকে দমিয়ে রাখা যায়নি, কখনো দমিয়ে রাখা যাবে না। শেখ মুজিব চেষ্টা করে পারেনি, তার মেয়ে হাসিনাও পারেনি। আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছে। তারপরও জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করতে পারেনি। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ ছেড়ে পালাতে চাইলে তাকে বরণ করতে বিশ্বের বড় বড় দেশ গ্রহণ করতে রাজি ছিল, তিনি পালাননি।
মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে আলেম–ওলামারা জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আলেম–ওলামারা মাঠে নেমেছিল। জালেম সরকার দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। মাওলানা মমতাজুর রহমান বলেন, দ্বীন কায়েমের পথে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা আলী উসমান, খুলশী সেগুনবাগান তালীমুল কোরআন কমপ্লেঙের চেয়ারম্যান হাফেজ মুহাম্মদ তৈয়ব।