আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে হারের তিক্ত স্বাদ পেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তাই এবারে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ সতর্ক ছিল টাইগাররা। আর সে সতর্কতার সুফল পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দ্বিতীয় দিন শেষেই জয়ের সুবাস পাচ্ছে স্বাগতিকরা। তাও ইনিংস ব্যবধানে জেতার পথে হাঁটছে সাকিবের দল। টেস্টে দুইবার ব্যাট করতে চায়না বাংলাদেশ। আর সে লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছে টাইগার শিবির। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ৪ উইকেটে ২৭ রান। এখনো ইনিংস পরাজয় এড়াতে তাদের দরকার ১২৮ রান। হাতে উইকেট আছে ৬টি। তাই বাংলাদেশ চাইবে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে না নামতে। এখন সে দায়িত্বটা বাংলাদেশের স্পিনারদের উপরই বেশি। আইরিশদের প্রথম ইনিংসের ২১৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অল আউট হয় ৩৬৯ রানে। ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা আইরিশরা দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেকের বেশি রান আসে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে মুশফিক করেন ১২৬ রান। সাকিব থমকে যান শতরান থেকে ১৩ রান দূরে। খেলেছেন অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে। তাই দিন শেষে সেঞ্চুরিটা না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে সাকিবকে। আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ মোমনিুলকে হারায় ৬ রান পর। আগের দিনের ১২ রানের সাথে আর ৫ রান যোগ করে ফিরেন মোমিনুল।
সাকিব ক্রিজে গিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক। একের পর এক শট খেলেছেন উইকেটের চারদিকে। সে সুবাধে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন সাকিব মাত্র ৪৫ বলে। এর চেয়ে কম বলে বাংলাদেশের পক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাকিবই। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সাকিবের মতো দ্রুত গতিতে না হলেও মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৬৯ বল। হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর দুজন একই গতিতে ছুটতে থাকেন। তাদেরকে বিপাকে ফেলার মতো কিছু করতেও পারেননি আয়ারল্যান্ডের কোনো বোলার। এক সময় মনে হচ্ছিল দ্রুততম সেঞ্চুরিটাও করবেন সাকিব। কিন্তু সেটা আর হলো না। সাকিব নিজেকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন নিজেই। ম্যাকবব্রাইনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে প্যাডল সুইপের মতো খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ১৪ চারের সাহায্যে সাজানো তার ইনিংস থামে ৯৪ বলে ৮৭ রান করে। এই নিয়ে টেস্টে ১৩ বার ৮০ রান ছুঁয়েও সেঞ্চুরি করতে পারলেন না সাকিব। মুশফিকের সঙ্গে তার ১৫৯ রানের জুটি আসে ১৮৮ বলে।
সাকিব মিস করলেও মুশফিক অবশ্য মসৃণ ব্যাটিংয়েই এগিয়ে গেছেন শতরানের পথে। ১৩৫ বলে তিনি সেঞ্চুরি পূরণ করেন। টেস্টে ১০ সেঞ্চুরি নিয়ে এখন তিনি তামিম ইকবালের পাশে। বাংলাদেশের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু মোমিনুল হকের ১১টি সেঞ্চুরি করেন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পর রানের গতি আরও বাড়ে মুশফিকের সঙ্গে লিটন কুমার দাসের জুটিতে। ৮৪ বলে ৮৭ রানের জুটির শেষ হয় লিটনের বিদায়ে। ৮ টি চারের সাহায্যে ৪১ বলে ৪৩ রান করেন লিটন। মুশফিক ও মিরাজ জুটি এরপর দলকে এগিয়ে নেন আরেকটু। চা–বিরতির পর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাকব্রাইনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুশফিক বিদায় নেন ১৬৬ বলে ১২৬ রান করে। এরপর লোয়ার অর্ডার ধসে পড়ে দ্রুতই। আরেকপাশে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মিরাজ পূরণ করেন নিজের হাফ সেঞ্চুরি। ৬টি চার ও ২ টি ছক্কায় ৫৫ রান করে মিরাজের বিদায়েই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। স্বাগতিকরা শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৩৮ রানে। ৬ উইকেট নিয়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড করেন অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।
১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে সাকিবের কাছে ধাক্কা খেয়ে। প্রথম ইনিংসে ৬৫ ওভারের আগে বোলিংয়ে না আসায় যিনি ছিলেন আলোচিত, সেই সাকিব এবার বল হাতে নেন প্রথম ওভারেই। জেমস ম্যাককলামকে ফিরিয়ে দলকে সাফল্যও এনে দেন প্রথম ওভারেই। এরপর দুই পাশ থেকে চলতে থাকে সাঁড়াশি আক্রমণ। মারি কমিন্স ও অ্যান্ডি বালবার্নিকে টিকতে দেননি তাইজুল ইসলাম। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার কার্টিস ক্যাম্পার। সপ্তম ওভারে আয়ারল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩। হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর এরপর বাকি সময়টা পার করে দেন কোনো রকমে। তবে আইরিশদের সামনে আশার আলো খুব একটা নেই। এখন দেখার বিষয় আজ কতক্ষণ টিকতে পারে আইরিশরা।