একাদশে ভর্তির ২য় পর্যায়ের ফলাফলেও জিপিএ-৫ পাওয়া চট্টগ্রামের ৩৮২ জন শিক্ষার্থীর কলেজ জোটেনি। এর আগে প্রকাশিত প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে কলেজ না পাওয়া জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৬৭ জন। এদের সিংহ ভাগই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ ধারী।
তবে গতকাল ২য় পর্যায়ের ফল প্রকাশের পর কলেজ না পাওয়া জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮২ জনে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় ১৮ হাজার ৬৮৮ জন। এর মাঝে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া মোট ১৮ হাজার ৬৮৮ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করে ১৮ হাজার ১২৩ জন। এর মাঝে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭৪১ জন ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েও আরো ৩৮২ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তালিকায় কলেজ পায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশিত হয়। আবেদনকারীদের মাঝে চট্টগ্রামের সবমিলিয়ে ১০ হাজার ৬৬ জন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় তালিকায়ও ঠাঁই পায়নি।
সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদনের সুযোগ থাকলেও প্রথম পর্যায়ের আবেদনে কম সংখ্যক কলেজ পছন্দ দেয়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থী কলেজ পায়নি বলে মনে করেন ভর্তি প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
২য় তালিকায়ও কলেজ না পাওয়ায় ভর্তির জন্য মনোনয়ন পেতে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীকে। ওই দিন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ৩য় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। এর আগে ১৬ জানুয়ারি (একদিন) ৩য় দফায় পুনরায় আবেদন করতে হবে এসব শিক্ষার্থীকে।
তবে ৩য় দফায় আবেদনকালে তাদের আর আবেদন ফি দিতে হবে না। অর্থাৎ কলেজের পছন্দক্রম পরিবর্তন, নতুন কলেজ যুক্তকরণ বা কোন কলেজ বাদ দেয়ার মাধ্যমে আগের (প্রথম দফায় করা) আবেদনটি আপডেট বা সংশোধন করলেই চলবে।
জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তির জন্য তালিকায় ঠাঁই না পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, সর্বোচ্চ দশটি কলেজে আবেদনের সুযোগ থাকলেও জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের ক্ষেত্রে ৫/৬টি’র বেশি কলেজ দেয়নি। তাদের ধারণা ছিলো জিপিএ-৫ পাওয়ায় ৫/৬টি কলেজে আবেদন করলেই হবে। আর বেশি করার দরকার নেই। কিন্তু যেসব কলেজে তারা আবেদন করেছে সে সব কলেজে তাদের তুলনায় বেশি নম্বর প্রাপ্ত আবেদনকারীর সংখ্যা হয়তো বেশি ছিলো।
যার কারণে আবেদন করা ওই ৫/৬টি কলেজের একটিতেও তাদের সুযোগ হয়নি। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক (দশটি) কলেজে আবেদন করলে এ সমস্যা হতো না। আবেদন চলাকালীন সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতি আমরাও বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই তা করেনি। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেও অনেকে ৫/৬টির বেশি কলেজ পছন্দ দেয়নি। যার কারণে সর্বোচ্চ পয়েন্ট ধারী হয়েও তারা প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে ভর্তির জন্য কোন কলেজে মনোনীত হয়নি। এরপরও এসব শিক্ষার্থীর কলেজ পাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই জানিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, সবমিলিয়ে কলেজগুলোর মোট আসন সংখ্যার তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা কম।
যার কারণে সামগ্রিক ভাবে চট্টগ্রামে আসন সংকট হবে না। যদিও কাঙ্ক্ষিত কলেজ হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে সব শিক্ষার্থীই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। যারা প্রথম ও ২য় তালিকায় মনোনয়ন পায়নি, তাদের পরবর্তী তালিকায় মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক।
শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখার তথ্য মতে- চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে এবার ২৭৫টি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদিত এসব কলেজে সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২৭টি। বিপরীতে বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য এবার আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২৮ হাজার ৭১৫ জন। সে হিসেবে একাদশে ভর্তিতে আসন সংকট থাকছে না। বরঞ্চ আরো ৪৫ হাজারের বেশি (৪৫ হাজার ৭১২) আসন শূন্য থাকবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। এর মাঝে বিজ্ঞান বিভাগে ১৪ হাজার ৫২৫ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৩ হাজার ৬৬২ জন এবং মানবিকে ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পায়। যদিও পুনঃনিরীক্ষার পর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো ২৪ জন বেড়েছে। সে হিসেবে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৮ জনে।