দ্বিতীয় আউটার রিং রোড চালু হবে আগামী জুনে

কালুরঘাট-শাহ আমানত সেতু সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ ৮৫ শতাংশ

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের দ্বিতীয় আউটার রিং রোড খ্যাত কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়কটি আগামী জুনে চালু করে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ কাম সড়কটির নির্মাণ কাজ ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কালুরঘাট অংশে পাঁচশ’ মিটারের মতো জায়গা ভূমি জটিলতার কারণে আটকে থাকলেও সেই সংকটেরও সুরাহা হয়েছে। নগরীর বিস্তৃত এলাকার জীবনমান এবং আবাসনসহ সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি শহর রক্ষা বাঁধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একইসাথে প্রকল্পটিতে পর্যটন এবং নগরবাসীর প্রাত্যহিক বিনোদনেরও ব্যাপক আয়োজন থাকছে। সাত কিলোমিটারের ওয়াকওয়েসহ নদীর পাড়ে মানুষের বিনোদনের জায়গা করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু (চাক্তাই খালের মুখ) থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘চিটাগাং আউটার রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায়’ নামের প্রকল্পটি শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি শহরের আউটার রিং রোড হিসেবেও অসাধারণ ভূমিকা রাখবে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদার পর্যন্ত প্রথম আউটার রিং রোড ফৌজদারহাট বায়েজিদ রিং রোড হয়ে অনন্যা আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে যাওয়া সড়ক ধরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং সেখান থেকে কালুরঘাট হয়ে শাহ আমানত ব্রিজ পার হয়ে চাক্তাই খালের মুখ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে আউটার রিং রোড।

সিডিএ সূত্র জানায়, কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খালের মুখ পর্যন্ত চার লেনের ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নদীর বাঁধ হিসেবেও গড়ে তোলা হচ্ছে। এই রিং রোডেও পতেঙ্গার আদলে ওয়াকওয়ে এবং মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্পের শুরুতে ওয়াকওয়ে বা বিনোদনের অবকাঠামোগত নির্মাণের ব্যবস্থা না থাকলেও পরবর্তীতে প্রকল্প সংশোধন করে ৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়েসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে করে প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটিতে মোট ২ হাজার ৯শ’ ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় শুধু রাস্তা বা বাঁধই নয়, একইভাবে বোটপাসসহ ১২টি স্লুইচগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২টি স্লুইচ গেটের মধ্যে ইতোমধ্যে ১০টি চালু করে দেয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট দুইটি স্লুইচ গেট নির্মাণের কাজ চলছে। মাস কয়েকের মধ্যে এই দুইটি স্লুইচ গেটও চালু করে দেয়া সম্ভব হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস প্রকল্পটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এই সড়কটি শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি করবে। কালুরঘাট থেকে বহু গাড়ি ওই সড়ক ধরে চলে গেলে শহরের ভিতরে গাড়ির চাপ অনেকটা কমে আসবে। এছাড়া শহর রক্ষা বাঁধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। গত বর্ষায় এই সড়কে স্থাপিত স্লুইচ গেটগুলোর সুফল মিলেছে। এটি চট্টগ্রামের একটি নয়া পর্যটন স্পট এবং নগরবাসীর বিনোদনের জায়গা হয়ে উঠেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে এটি এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও শক্তিশালী অবদান রাখবে। কল্পলোক আবাসিক এলাকার পেছনে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়েসহ নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দাশ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের রাস্তাটির বেশিরভাগ কাজই হয়ে গেছে। শুধু কালুরঘাট অংশে অল্প জায়গায় কাজ বাকি রয়েছে। মাস তিনেক সময়ের মধ্যে ওই কাজ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের মোট ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো শেষ করে প্রকল্প মেয়াদ আগামী জুনের মধ্যে রাস্তাটি পুরোদমে চালু করে দেয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ৪০ কিমি যানজট, যাত্রীদের তিন ঘণ্টার দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাইকে, কাভার্ডভ্যান চাপায় চালকের মৃত্যু