চিটাগাং কিংস এবং দুর্বার রাজশাহী। দু দলেরই বিপিএলের এবারের আসর শুরু হয়েছিল হার দিয়ে। তবে মাঝখানে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিল রাজশাহী। আর গতকাল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল চিটাগাং কিংসের। আর সে ম্যাচেই দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে ফিরল চিটাগাং। উসমান খানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর আলিস আল ইসলাম, আরাফাত সানি, শরীফুল, ওয়াসিমদের আগুন ঝরানো বোলিং এ ভর করে ১০৫ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় চিটাগাং কিংস। এই ম্যাচে চিটাগাং কিংসের ইসমান খান একাই করেছেন ১২৩ রান। আর রাজশাহীর সবাই মিলে করেছেন ১১৪ রান। উসমানের সেঞ্চুরিতে চিটাগং কিংস পৌঁছে গেল আসরের সর্বোচ্চ দলীয় রানে। সেই রানের নাগাল পাওয়া তো দূরের কথা, উসমানের রানকেও ছুঁতে পারল না দুর্বার রাজশাহী। ২০২৩ বিপিএলের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে সেঞ্চুরি করা উসমান এবার চট্টগ্রামের আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন ৬২ বলে ১২৩ রানের ইনিংস। রাজশাহী রান তাড়ায় গুটিয়ে যায় স্রেফ ১১৪ রানে। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে এর চেয়ে বড় ব্যবধানের জয় আছে কেবল একটিই। সেটিও চিটাগং কিংসের। ২০১৩ আসরে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ১১৯ রানে জিতেছিল তারা
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা চিটাগাং কিংস ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই হারায় পারভেজ হোসেন ইমনকে। রান করতেই পারেননি আগ্রাসী ওপেনার। এরপর তৃতীয় ওভারে তাসকিনকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে ঝড় তোলার আভাস দেন উসমান। পরের ওভার থেকেই উত্তাল তার ব্যাট। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের টানা চার বলের মধ্যে মারেন তিন চার ও এক ছক্কা। পরের ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি মোহর শেখ অন্তরকে। ফিফটি করতে তার বল লাগে কেবল ২১টি। অপরদিকে বিপিএল অভিষেকে শুরুতে একটু সময় নেন গ্রাহাম ক্লার্ক। ৫ ওভারে চিটাগংয়ের রান যখন ৫০, ক্লার্কের রান তখন ৯ বলে ২। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান পেয়ে বসেন শফিউল ইসলামকে। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা পেসারের এক ওভারে চারটি চার ও একটি মারেন তিনি। শফিউলের ওভারে অমন তাণ্ডবের পরও ক্লার্ক মূলত ছিলেন সহযোগী। ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকেন মূলত উসমান। বাঁহাতি স্পিন, অফ স্পিন, লেগ স্পিন কিংবা পেস– তার সামনে পাত্তা পায়নি কিছুই। দুজনের জুটির শতরান আসে কেবল ৫২ বলেই। একাদশ ওভারে ক্লার্কের বিদায়ে জুটি থামে ৬৩ বলে ১২০ রানে। বিপিএল অভিষেকে ২৫ বলে ৪০ রান করেন ডারহামের ব্যাটসম্যান। শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে যেরকম ব্যাটিং প্রত্যাশিত, দলকে তেমন কিছুই দেন মোহাম্মদ মিঠুন। চিটাগাং অধিনায়কের সঙ্গে উসমানের জুটিতে ৬৩ রান আসে কেবল ৩১ বলেই। দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ বলে ২৮ করেন মিঠুন। ৮৯ থেকে সোহাগ গাজীতে ছক্কা মেরে ৯৫ রানে পৌঁছে যান উসমান। পরের বলে চেষ্টা করেন আরেকটি বড় শটের। ব্যাটে লাগেনি ঠিকমতো। ক্যাচ উঠে যায় ফাইন লেগের দিকে। দুই ফিল্ডার শফিউল ইসলাম ও সাব্বির হোসেনের সংঘর্ষে জীবন পেয়ে যান উসমান। পরে আর ছক্কার চেষ্টা না করে ওই ওভারেই শতরান পূরণ করেন তিনি ৪৮ বল খেলে। সেঞ্চুরির পর দুটি ছক্কা মারেন তিনি মোহর শেখকে। শেষ পর্যন্ত শেষের আগের ওভারে তার ইনিংস শেষ করেন তাসকিন। ইনিংসের শেষ দুই বলে শফিউলকে চার ও ছক্কা মেরে শেষ করেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হায়দার আলি। ৬২ বলে ১৩টি চার আর ৬টি ছক্কায় ১২৩ রান করে ফিরেন উসমান। আর তার দল পৌছে যায় ২১৯ রানে। তাসকিন নিয়েছেণ ২ উইকেট।
২২০ রান তাড়া করতে নেমে রাজশাহী ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। প্রথম ওভারে শরিফুল ইসলামকে দুটি চার মেরে ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যান সাব্বির হোসেন। তিনে নামা এনামুল হক অবশ্য ভালো করতে পারেননি । আগের দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা এনামুল ফিরেছেন ৯ বলে ৮ রান করে। তবে মোহাম্মদ হারিসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানের চাকা ঘুরতে থাকে দ্রুতই। ৫ ওভারে ৫০ পেরিয়ে যায় রাজশাহী। মোহাম্মদ ওয়াসিম আক্রমণে এসেই স্বস্তি দেন চিটাগংকে। তার প্রথম বলেই বিদায় নেন ১৫ বলে ৩২ রান করা হারিস । কিছুদিন আগে জাতীয় লিগ টি–টোয়েন্টিতে ভালো করা আকবর আলি আউট হয়ে যান একটু ঝলক দেখিয়ে । ৮ বলে ১৯ ররান করেন তিনি। আকবরের বিদায়ের পরও লড়াইয়ে ছিল রাজশাহী। ১০ ওভারে তাদের রান ছিল ৯৪। এরপরই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংস। ২০ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে তারা শেষ ৬ উইকেট। আর তাতেই ১৭ বল বাকি থাকতে ১১৪ রানে অল আউট হয় রাজশাহী। চিটাগাং কিংসের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আরাফাত সানি এবং আলিস আল ইসলাম। ২টি করে উইকেট নিয়েছেণ মোহাম্মদ ওয়াসিম এবং শরীফুল ইসলাম।