দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বান, শর্ত নিয়ে কৌতূহল

কমলাপুর আইসিডিতে ঠিকাদার নিয়োগ

হাসান আকবর | সোমবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার করা সম্ভব হয়নি। বিগত সরকারের আমলে আহূত টেন্ডারে কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং কাজ যাতে বিশেষ একটি কোম্পানি পায়, ওই ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। দেশের আইসিডি মালিকদের বিরোধিতার মুখে পড়ে ওই টেন্ডার। সরকার পতনের পর ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। মেয়াদ শেষে ডিপিএম পদ্ধতিতে আগের কোম্পানিকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। অবশেষে গতকাল দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল টেন্ডারে বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার মতো কোনো শর্ত জুড়ে দেওয়া রয়েছে কিনা তা নিয়ে শিপিং সেক্টরে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। টেন্ডার ডকুমেন্টস কেনার আগে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার সুযোগ নেই বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার টেন্ডারে তেমন কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও সন্নিহিত অঞ্চলের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের সুবিধার পাশাপাশি সড়কে চাপ কমাতে ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চালু করা হয় কমলাপুর ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো (আইসিডি)। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলওয়ের মাধ্যমে আমদানিরপ্তানির কন্টেনার কমলাপুর আইসিডিতে আনা নেওয়া করা হয়। বছরে ৮০ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার এই আইসিডি হ্যান্ডলিং করে। গত বছর ৩৯ হাজার ২১১ টিইইউএস আমদানি পণ্য বোঝাই এবং ৪০ হাজার ৭৯৬ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে হ্যান্ডলিং করা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত ঠিকাদার এসব কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ঠিকাদার হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেক কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে কয়েক বছর ধরে। তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয় বিগত সরকারের আমলে। কিন্তু টেন্ডারে ‘সরকারি ঠিকাদার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকার’ একটি শর্ত জুড়ে দেওয়ায় তা একটি বিশেষ কোম্পানিকে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে বলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা। বিকডা ওই সময় টেন্ডারের ওই শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়ে বলেছিল, চট্টগ্রামের কেডিএস লজিস্টিক বা এছাক ব্রাদার্সের সাথে কমলাপুর আইসিডির কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কমলাপুর একটি চালু আইসিডি। ওখানে নির্মাণ কাজের কোনো ব্যাপার নেই। তাহলে সরকারি ঠিকাদারের শর্ত কেন? এমন প্রশ্ন তোলেন আইসিডি মালিকরা। আইসিডি পরিচালনার জন্য আইসিডির পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতা না চেয়ে সরকারি ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়াকে ওই সময় বিকডার সদস্যরা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, বন্দরের উচিত দেশের আমদানিরপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে বন্দরের কাজ ঝুঁকিতে না ফেলা। টেন্ডারে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে, এতে দেশের ২১টি বেসরকারি আইসিডি পরিচালনাকারী কোনো প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হবে না। যারা নিজেদের জমিতে নিজেদের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে বড় বড় আইসিডি অপারেট করছে, তাদেরকে বাদ দেওয়ার শর্তগুলো আইসিডি মালিকদের ক্ষুদ্ধ করে।

বিষয়টি নিয়ে বিকডার প্রতিবাদের মাঝে ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতন হয়। সরকার পতনের পর ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। এতে করে নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ডিপিএম পদ্ধতিতে ঠিকাদার হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেকের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।

গতকাল দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা পর্যন্ত টেন্ডার ডকুমেন্টস বিক্রি এবং টেন্ডার দাখিল করা যাবে। ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টায় টেন্ডার বঙ খোলা হবে। প্রিটেন্ডার মিটিং অনুষ্ঠিত হবে ৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায়। টেন্ডারে নিজস্ব ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করার কথা বলা হয়েছে।

কমলাপুর আইসিডিতে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বানের পর চট্টগ্রামের আইসিডি মালিক, বার্থ অপারেটর এবং শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। আগের মতো বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য কোনো বিশেষ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছেন সবাই। তবে টেন্ডার ডকুমেন্টস কেনার আগে বিষয়টি জানার সুযোগ নেই জানিয়ে সূত্র বলেছে, বিশেষ কোনো শর্ত জুড়ে দেওয়া হলে আবার প্রতিবাদ জানানো হবে। তবে বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এবার টেন্ডারে বিশেষ কোনো শর্ত নেই। সবাই অংশ নিতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম আজাদীকে বলেন, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদারের ওপর সার্বিক উৎপাদনশীলতা নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আইসিডিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ব্যাপারটি স্পর্শকাতর। ঠিকাদারের কার্যক্রমের ওপর চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত। এই আইসিডি থেকে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯৫ টিইইউএস কন্টেনার গায়েবের ঘটনা ঘটে। শুল্ক পরিশোধ না করে এগুলো খালাস করা হয়েছে। এলইডি লাইট, বডি স্প্রে এবং কারখানার কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছিল ওই কন্টেনারগুলোতে। উচ্চ শুল্কের এসব পণ্য রাজস্ব ফাঁকি দিতে গোপনে খালাস করা হয়েছিল বলে আশঙ্কা শুল্ক কর্মকর্তাদের। কন্টেনারগুলো কীভাবে আইসিডি থেকে গায়েব হলো তা নিয়ে তদন্ত টিম কাজ করছে বলে একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ সারা দেশে দ্বিতীয় চট্টগ্রামের সানজিদ
পরবর্তী নিবন্ধবিচারপ্রার্থী জনগণের সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে