রাওয়ালাপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল যেন উড়ছে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম দিনটা বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও দ্বিতীয় দিন থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বজায় রেখেছে টাইগাররা। পাকিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ করেছিল ২৬২ রান। প্রথম দুই দিনে বাংলাদেশের বোলার এবং ব্যাটাররা দুর্দান্ত খেলেছে। দেখার বিষয় ছিল পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে কেমন করে বাংলাদেশের বোলাররা। এই ইনিংসে বোলাররা যেন অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেলেন। বিশেষ করে তিন পেসার তাসকিন, হাসান মাহমুদ আর নাহিদ রানার আগুন ঝরানো বোলিংয়ে বাংলাদেশ এখন পাচ্ছে দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ের সুবাস। পাকিস্তানকে মাত্র ১৭২ রানে অল আউট করে দিয়ে নিজেদের জন্য লক্ষ্য সেট করে বাংলাদেশ মাত্র ১৮৫ রানের। সেখানেও দারুন সুচনা দুই ওপেনার সাদমান এবং জাকির হাসানের। কিন্তু ম্যাচের শেষ সেশন শুরুর মুহূর্তে রাওয়ালপিন্ডিতে নেমে এলো প্রায় সন্ধ্যা। ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। ফ্লাড লাইট জ্বালিয়েও খেলা শুরু করা গেল না। ফলে চতুর্থ দিনের মতো খেলা বন্ধ করা হয়। তারপরও বাংলাদেশের সম্ভাবনার আকাশ ঠিকই আলো ঝলমলে। স্মরণীয় এক সিরিজ জয়ের দুয়ারে নাজমুল হোসেন শান্তরা। যেখানে প্রতিপক্ষের মাটিতে প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশ করার আরেকটি কৃতিত্ব গড়া এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার। দেশের বাইরে এক সিরিজে দুটি টেস্ট জয়, দেশের বাইরে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে আছে একটিই। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জয় এসেছিল ২–০ ব্যবধানে। তবে সেবার চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় শীর্ষ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের কেউ খেলেননি সিরিজে। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেছিল তারা। বিদেশে পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় হতে পারে এটিই।রাওয়ালাপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। আগের দিন ব্যাট হাতে কার্যকর এক জুটি গড়ার পর শেষ বিকেলে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। সেই ধারা ধরে রেখেই গতকাল আরও তিনটি উইকেট তুলে নেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে পাকিস্তানে নিয়েছেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ। নাহিদের উইকেট একটি কম। তবে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন সম্ভবত তিনিই বেশি। গতি দিয়ে তিনি আলাদা করে নজর কেড়েছেন আগেই। চতুর্থ দিনে তিনি মেলে ধরেছেন নিজের সেরাটা। দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বাউন্স ও আগ্রাসন মিলিয়ে নাকাল করেছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। গতকাল ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন রানা। পাকিস্তানের বাকি উইকেটটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। টেস্টে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সবকটিই পেসাররা নিতে পারলেন এই প্রথম।
চতুর্থ দিনের শুরুতে সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ শুরুটা ভালোই করেছিলেন। সাইমকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন। পরে তার জায়গায় আক্রমণে এসে টানা তিন ওভারে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। এর মধ্যে ছিল বাবর আজমের উইকেটও। যাকে তিনি আউট করলেন সিরিজে দ্বিতীয়বার। বাবর ফিরেছেন ১১ রান করে। এর আগে অবশ্য সাইম আইয়ুব ২০ এবং অধিনায়ক শান মাসুদ ফিরেছেন ২৮ রান করে। এরপর সাউদ শাকিল ফিরলে ৮১ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় পাকিস্তান। দ্রুত ফিরতে পারতেন মোহাম্মদ রিজওয়ানও। কিন্তু প্রথম বলেই জীবন পান তিনি। এরপর ৫৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন সালমান আলি আঘাকে নিয়ে। হাসান নতুন স্পেলে ফিরে টানা দুই বলে ফেরান রিজওয়ান ও মোহাম্মদ আলিকে। ৪৩ রান করেন রিজওয়ান। সালমান এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে রান বাড়ান কিছুটা। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারেননি। আবরার আহমেদকে চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন নাহিদ রানা । মির হামজাকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে থামিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। আর সে সাথে পুরন করেন টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ৫ উইকেট।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে নতুন বলে মির হাজমা ও খুররাম শাহজাদ ধস নামিয়েছিলেন টপ ও মিডল অর্ডারে। এবারেও সে শংকা ছিল। কিন্তু এবার জাকির ও সাদমান তা হতে দেননি। ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জাকির যেন শট খেলার পণ করেই নেমেছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই শাহজাদকে দারুণ ফ্লিক শটে ছক্কা মারেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া এই পেসারকেই পরে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন তিনি পুল শটে। দুটি করে চার ও ছক্কায় তার রান হয়ে যায় ২৩ বলে ৩১। বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু চা বিরতির পর মাঠে নামার প্রস্তুতি নিলেও আলোক স্বল্পতার কারনে আর নামা হয়নি।
রাওয়ালাপিন্ডিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে শেষ দিনেও। তবে শঙ্কাটা পাকিস্তানেরই বেশি। সিরিজ বাঁচাতে হলে যে জিততেই হবে তাদের। শেষ দিনে খেলা না হলে বা ড্র হলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। তবে অসাধারণ এক জয়ের এত কাছাকাছি এসে জিততে না পারাটা হবে হতাশারই। পাকিস্তানের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ তো আর সবসময় আসবে না।