চলতি বছরেই চালু হচ্ছে দ্বিতীয় আউটার রিং রোড। ইতোমধ্যে টুকটাক যান চলাচল করা সড়কটি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চালানোর লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( সিডিএ)। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি শেষ করার কথা রয়েছে।
নগরীর কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত বিস্তৃত বাঁধ কাম সড়কটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নগরীর যান চলাচলে গতি আনা, অনুন্নত থাকা বিস্তৃত এলাকার জীবনমান উন্নয়ন, পর্যটন এবং আবাসনসহ সার্বিক ক্ষেত্রে এই শহর রক্ষা বাঁধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাঁধের ১২টি স্লুইচ গেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিডিএর প্রকৌশলীরা জানান, নগরীতে যানবাহনের চাপ কমানোসহ নানা লক্ষ্য নিয়ে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন চাক্তাই খালের মুখ থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ–কাম সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় আউটার রিং রোড। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ জুনের প্রকল্পটি সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তৃ কোভিড পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূলতায় নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। ইতোমধ্যে তিন দফা সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শুরুতে ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা থাকলেও বিভিন্ন ধরনের কাজ বাড়ায় ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৯শ ৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা ও বাঁধের মধ্যে ৭ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি কাজগুলোও দ্রুত করা হবে। বাঁধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাস্তা কার্পেটিং শুরু করা হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতার ৪ লেনের সড়ক–কাম শহর রক্ষা বাঁধে বর্ষায় নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি স্লুইচ গেট রয়েছে। এসব স্লুইচ গেটে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্প স্থাপন করা হবে। ১২টি স্লুইচ গেটের মধ্যে দশটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। গেটগুলো অস্থায়ীভাবে চালু করা হয়েছে। নগরীর বিস্তৃত এলাকার জলাবদ্ধতা সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপিত স্লুইচ গেটগুলো জোয়ারের পানি ঠেকানোর পাশাপাশি ভিতরের বৃষ্টির পানি পাম্পের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হবে। এসব স্লুইচ গেটে ইউরোপ থেকে আনা বিশেষ ধরনের মরিচা প্রতিরোধক স্টিলের গেট স্থাপন করা হয়েছে।
স্লুইচ গেটের সুফল মিলতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, প্রতিটি স্লুইচ গেট সড়কের ব্রিজ হিসেবে কাজ করবে। বাকি দুটি স্লুইচ গেট তুলনামূলকভাবে ছোট। এগুলোর নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে এই দুটির কাজও শেষ হবে। স্লুইচ গেটগুলোর জন্য বিদেশ থেকে শক্তিশালী পাম্প আনা হয়েছে। আগামী বর্ষার আগে এসব পাম্প স্থাপনের কাজ শেষ হবে।
‘চিটাগাং আউটার রিং রোড দ্বিতীয় পর্যায়’ নামের প্রকল্পটি শুধু নগরীর যান চলাচল নয়, বিস্তৃত এলাকার আবাসনসহ জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে পড়ে থাকা একসময়ের পরিত্যক্ত হাজার হাজার একর ভূমি উন্নয়নের মূলস্রোতে চলে এসেছে। একটি রাস্তা পুরো এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে পুরো এলাকায় নতুন বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। ওখানে গড়ে উঠছে আবাসিক ও শিল্প প্লট। বাড়িঘর নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। যেসব জায়গায় গাড়ি যাওয়ার কথা কেউ কল্পনা করেনি, সেখানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটতে শুরু করেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কটি নির্মাণের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। এই সড়ক ঘেঁষে চান্দগাঁও হামিদচরে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার দিকে একটি সংযোগ সড়ক রাখা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহন আউটার রিং রোড দিয়ে কালুরঘাট এলাকায় পৌঁছার সুযোগের ফলে নগরীতে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, বাঁধের পাশে নদীর পাড়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী মাস কয়েকের মধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।
প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, শহরের জন্য প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি আনবে। শহর রক্ষা বাঁধ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পর্যটন, আবাসন এবং শিল্পায়নে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করা প্রকল্পটি এলাকার জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অবদান রাখতে শুরু করেছে।