শুল্ক ফাঁকির দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রাখার পরেও থামছে না মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি। অভিযোগ রয়েছে একশ্রেণীর অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য খালাস করে নিয়ে যায় আমদানিকারকরা। এক্ষেত্রে যা আটক হয়, তা মোট মিথ্যা ঘোষণায় আসা চালানের অর্ধেকও না। তবে কাস্টমস কর্তারা বলছেন, আমদানি নিষিদ্ধ বা শর্তযুক্ত পণ্য খালাসে সহযোগিতার চেষ্টা, ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য খালাসে চেষ্টা এবং বিভিন্ন জাল জালিয়াতির দায়ে গত ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭টি ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে এবং একই ধরনের অভিযোগে ৩০টি সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং কাস্টমস আইনে মামলা দায়ের করেছে কাস্টমসের এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট। কয়েকজন সিএন্ডএফ নেতা জানান, সিএন্ডএফ কেবল ডকুমেন্টেশনের কাজ করে। আমদাানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে পণ্য খালাস করে। কোন আমদানিকারক কি পণ্য নিয়ে এসেছে, তা জানার সুযোগ নেই। অথচ বারবার সিএন্ডএফকে বলির পাঠা বানানো হয়। জানা গেছে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি রোধে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় কাস্টমস অ্যাক্টের কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর-৩২ ধারায় বিধান রয়েছে অপরাধ সংঘটিত হলে সর্বনিম্ন ২০০ শতাংশ জরিমানা করার। অর্থাৎ কোনো পণ্য আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করলে সর্বনিম্ন ২০০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা চীন থেকে ব্লিচড ফেব্রিঙ ঘোষণায় আসা দুই কন্টেনারে প্রায় ৪০ টন পর্দা ও সোফার কাপড় আটক করে। তবে চালানটির আমদানিকারক পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান নাকানো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- এ চালান তারা আমদানি করেনি। এ বিষয়ে তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। কাস্টমস কর্তারা সে সময় জানায়, মিথ্যা ঘোষণায় এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে গত ৭ জানুয়ারি চীন থেকে কাঁচা তুলা ঘোষণায় আসা দুই কন্টেনার উচ্চ শুল্কের সোফার কাপড় আটক করেছে এআইআর টিম। চালানটি আমদানি করে নগরীর জুবিলি রোডের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইএন এন্টারপ্রাইজ। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক এক কোটি ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে বলে জানায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার সহকারী কমিশনার (এআইআর শাখা) মো. রেজাউল করিম বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ঠেকাতে আমরা তৎপর রয়েছি। বিভিন্ন সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পণ্য চালান আটক হচ্ছে। বর্তমান কমিশনারের নির্দেশনায় কাস্টমসের এআইআর টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। অসাধু কাস্টমস কর্তাদের যোগসাজশে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য খালাস হচ্ছে অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা রাজস্ব সুরক্ষায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আমদানির সাথে জড়িত থাকার দায়ে সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।