বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেষ পর্বে গতকাল বুধবার ঢাকা বিভাগে দলের তৃণমূল নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসময় উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার গতকাল বাসসকে এ খবর জানিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন, কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান– এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী–সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন; কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরা রণাঙ্গণে যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ আমাদের দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূল শক্তি ছিল– প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। অত্যাবশ্যকীয় একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রথম দিন থেকেই। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠন কোনো অবদান রাখতে পারেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখেছি দলীয় সরকারে কিভাবে একটি দলের লোকজন বিচরণ করে সর্বত্র; আর অন্য সবার অবস্থান হয়ে পড়ে তুচ্ছ আর গৌণ। ফলে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়।
তারেক রহমান আরও বলেন, এদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন; তারা সকলে আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়।
তিনি বলেন, আমি বিনয়ের সাথে শুধু আমাদের আগামীর পরিকল্পনা আর সদিচ্ছার কথা জানাতে পারি, কারণ আমরা জানি– দেশের মানুষের সমর্থনই কেবলমাত্র আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহয়তা করতে পারে। তারেক রহমান বলেন, আশা করি জনগণ নিশ্চয়ই সেই সব দল বা ব্যক্তিকে জাতীয় সরকারে শামিল দেখতে চাইবেন না; যারা পুরো দেশটাকে একটা দল আর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লাখ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশে গড়েছে সম্পদের পাহাড়। গুম–খুন হামলা–মামলা নির্যাতনে দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, চাল, ডাল, লবণ, তেল, ওষুধের দাম মানুষের ধরা–ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। আইন, বিচার, নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এমন কি পালিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তেও শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলা; জনগণ নিশ্চয়ই সেই জালেমদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাইবে না।
বিগত ১৭ বছরের বিরামহীন আন্দোলনে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা–কর্মীর অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন।
তারেক রহমান বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের পরিবর্তিত আশা আর ভাষার সাথে নিজেদের মানিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের উপযুক্ত হতে নেতা–কর্মীদের পরামর্শ দেন। তিনি সাম্প্রতিককালে গজিয়ে ওঠা অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
তৃণমূলের প্রতি আবারও অগাধ আস্থা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, দলের সকল সঙ্কটকালে তৃণমূলই বিএনপিকে বার বার রক্ষা করেছে। এমপি, মন্ত্রী পদ–পদবীর প্রত্যাশা না করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদল যারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর বিএনপির আদর্শের প্রতি যে অবিচল আস্থা বরাবর রেখেছেন, সেটা অব্যাহত থাকলে দল হিসেবে বিএনপির সফলতা আর অগ্রযাত্রা কখনোই ব্যাহত হবে না।