পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ (১৮১৯–১৮৮৬)। দ্বারকানাথ ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সমাজসেবক। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ১৮১৯ মতান্তরে ১৮২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চাংড়িপোতা (বর্তমানে সুভাষগ্রাম) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন ভট্টাচার্য। হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন ছিলেন দাক্ষিণাত্য বৈদিক সমাজে একজন বিশিষ্ট স্মৃতিশাস্ত্রজ্ঞ ও বৈয়াকরণিক পণ্ডিত। শৈশবে দ্বারকানাথ পিতার নিকটই ব্যাকরণের পাঠ গ্রহণ করেন। পরে পণ্ডিত সর্বানন্দ সার্বভৌমের নিকট ব্যাকরণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৩২ সালে দ্বারকানাথ কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি ন্যায়, স্মৃতি, বেদান্ত, দর্শন, সাহিত্য, অলংকার, কাব্য ও জ্যোতিষ প্রভৃতি শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৪৫ সালে তাঁকে ‘বিদ্যাভূষণ’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৪৫ সালে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা শেষ করে দ্বারকানাথ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এখানে ব্রিটিশ প্রশাসকদের বাংলা ভাষা শেখানো তাঁর কাজ ছিল। এর পর তিনি সংস্কৃত কলেজে ফিরে আসেন। প্রথমে তিনি গ্রন্থাগারিক হিসাবে যোগ দেন। পরে পদোন্নত হয়ে তিনি অধ্যাপক হন। গ্রন্থাগারিক থেকে অধ্যাপক হবার সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন ঐ কলেজের অধ্যক্ষ। বিদ্যাসাগরের সুপারিশেই তাঁর পদোন্নতি হয়। বেশ কয়েক বছর সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার পর বিদ্যাসাগররের অনুপস্থিতিতে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে ১৮৭৩ সালে ৫৪ বৎসর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। দ্বারকানাথের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘সোমপ্রকাশ‘ পত্রিকা প্রকাশ। ১৮৫৮ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার চাঁপাতলা থেকে এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ঠবৎহধপঁষধৎ চৎবংং অপঃ চালু করেন। এই অসন্মানজনক আইনের প্রতিবাদে দ্বারকানাথ “সোম প্রকাশ” প্রকাশ করা এক বছরের বেশী সময় বন্ধ রাখেন। ১৮৮৩ সালের ৯ এপ্রিল থেকে আবার এই পত্রিকা কলকাতার মীরজাপুর থেকে প্রকাশিত হতে থাকে। সোমপ্রকাশ পত্রিকা আগেকার সাহেবি বাংলা, মৈথিলি বাংলা এবং সংস্কৃত বাংলা প্রভৃতি ভেঙে চুরে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা চালু করে বাংলাভাষা বিকাশে বড় অবদান রাখে। তাঁর রচনার মধ্য রয়েছে ‘নীতিসার’, ‘পাঠামৃত’, ‘ছাত্রবোধ’, ‘ভূষণসার ব্যাকরণ’; কাব্যগ্রন্থ: ‘প্রকৃত প্রেম’, ‘প্রকৃত সুখ’, ‘বিশ্বেশ্বর বিলাপ পদ্য’ প্রভৃতি। ‘সোমপ্রকাশ” ছাড়াও তিনি ১৮৭৮ সালে‘কল্পদ্রুম’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৮৬ সালের ২৩ আগস্ট দ্বারকানাথ মৃত্যুবরণ করেন।