চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গতকাল আদেশ দেন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগ গঠনের আদেশের মধ্য দিয়ে চব্বিশের মানবতাবিরোধী অপরাধে এই প্রথম শেখ হাসিনাসহ এই মামলার অপর আসামিদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেছেন। তিন আসামির মধ্যে একমাত্র তিনিই কারাগারে আটক আছেন, বাকি দুজনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় ট্র্যাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির থাকা আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন নিজের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ স্বীকার করে ঘটনার সত্য উদঘাটনে রাজ সাক্ষী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তার আইনজীবী এই বিষয়ে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রসিকিউশন টিমের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন আমির হোসেন। আর আবদুল্লাহ আল–মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক আছেন। তৃতীয় আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্য কী। তিনি তার দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি একজন সাক্ষী হিসেবে এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে হয়েছিল সেই অপরাধের সবকিছু যেহেতু তার জানবার কথা, সেইহেতু সমস্ত তথ্য তিনি আদালতকে উদঘাটনের ব্যাপারে সহ্যায়তার মাধ্যমে তিনি অ্যাপ্রুভার হতে চেয়েছেন। তার প্রার্থনা আদালত মঞ্জুর করেছেন। তিনি সাক্ষী হিসেব গণ্য হবেন। বাংলায় এটাকে বললে রাজসাক্ষী। কিন্তু আইনে যেটাকে বলা হয়েছে ‘অ্যাপ্রুভার’।
রাজসাক্ষী হলে মামুনকে ক্ষমা করা হবে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তাজুল বলেন, তার বক্তব্যের মাধ্যমে পুরোপুরি সত্য প্রকাশিত হলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন অথবা অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।