‘মন খারাপ। বিকিকিনি একদম হয়নি। পূরণ হয়নি প্রত্যাশা। আজ বন্ধের দিন হওয়ায় লোকজন মোটামুটি এসেছে। এতে কিছুটা মেলা মেলা ভাব এসেছে। এতদিন তো তাও ছিল না।’
কথাগুলো প্রিয়মুখ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী শুভ’র। তার সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বইমেলা–২০২৩ এ, প্রিয়মুখ এর স্টলে। সপ্তাহব্যাপী বইমেলার সমাপনী দিন ছিল গতকাল। ‘মেলা তো শেষ, সাড়া কেমন পেলেন?’ এমন প্রশ্ন করতেই চোখে–মুখে অপ্রাপ্তির ছাপ ফুটে উঠে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘মন খারাপ….’।
নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় সপ্তাহব্যাপী এ মেলা চলে। মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ৭৫টি স্টল ছিল।
মেলার শেষ দিনে অন্তত ১৫টি স্টলের বিক্রয়কর্মীর সাথে কথা হয় আজাদীর। সবার কণ্ঠেই ছিল প্রায় অভিন্ন সুর, বিক্রি তেমন হয়নি। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে আসা প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীরা ছিলেন রীতিমত হতাশ। থাকা–খাওয়াসহ অন্যান্য দৈনিক খরচও পোষাতে পারেনি বলে দাবি করেন তারা। পরিদর্শনে দেখা গেছে, মেলাপ্রাঙ্গণের পরিসর ছিল বৃহৎ। অংশ নেয় বাংলা একাডেমিসহ সরকারি ১০টি প্রকাশনা সংস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এছাড়া ঢাকার ৪৭টি প্রকাশনা সংস্থা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের আওতাভুক্ত ১৭টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। স্টলগুলো ছিল খ্যাতিমান লেখকদের বই দিয়ে সাজানো। এরপরও মেলায় ছিল না প্রত্যাশা অনুযায়ী লেখক–পাঠকদের আনাগোনা। মেলায় পাঠকের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে প্রকাশকরা দাবি করেন, প্রচারণা কম হয়েছে। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে তারা বলেন, মেলার প্রবেশপথের ফুটপাত ও সড়ক দখলে থাকে হকারদের। এটাও পাঠক–দর্শনার্থীদের বিমুখ করার অন্যতম কারণ।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু আজাদীকে বলেন, এমন দিনও গেছে অনেক প্রকাশকের দিনে ৪০০–৫০০ টাকাও বিক্রি হয়নি। ভালো ভালো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে মেলায়, এরপরও পাঠকের আনাগোনা কম থাকার অন্যতম কারণ প্রচারণার অভাব।
একই কথা বলেন প্রকাশন সংস্থা চন্দবিন্দুর স্বত্বাধিকারী মঈন ফারুক। তিনি আজাদীকে বলেন, আসা–যাওয়ার ভাড়াসহ মিলিয়ে দৈনিক ৪০০–৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। সেটাও তুলতে পারিনি। লেখকদেরও পদচারণা ছিল কম।
আবীর প্রকাশন এর স্বত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, আয়োজন সুন্দর। কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটি স্টলে ফ্যান দিয়েছে। ঢাকার বড় বড় সব প্রকাশনা এসেছে। কিন্তু বাইরের পরিবেশ খুব ভালো না। হকারের কারণে মেলায় ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া প্রচারণাও দুর্বল ছিল। বেচাকেনা কম হয়েছে।
রাদিয়া প্রকাশন এর স্বত্ত্বাধিকারী গোফরান উদ্দিন টিটু বলেন, আয়োজক কমিটি আজ (গতকাল) ২ হাজার টাকার বই কিনেছেন। এ ছাড়া দিনভর খুব একটি বিকিকিনি হয়নি। বন্ধের দিন হওয়ায় মেলায় লোকজন আজ মোটামুটি এসেছে। এতদিন কম ছিল। প্রচারণা কম থাকায় এমনটি হয়েছে বলে জানান তিনি।
নন্দন বইঘর এর বিক্রয়কর্মী সঞ্জয় বলেন, সাজানো–গোছানো ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু প্রচারণা কম ছিল। মাইকিং করতে পারত। এতদিন ৩০০/৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আজ আয়োজকরা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকার বই কিনেছেন, এটা ভালো দিক।
এ্যামেলিয়া প্রকাশন এর আফছার উদ্দিন লিটন বলেন, আমাদের স্টলে শিশুতোষ বই বিক্রি বেশি হয়েছে। আজ সাড়ে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এর আগে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়।
নতুন বই : সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বইমেলাকে ঘিরে নতুন বই প্রকাশে জোর দেন প্রকাশকরা। তাই বছরের অন্যান্য সময়ে আয়োজিত বইমেলায় নতুন বই তেমন পাওয়া যায় না। তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বইমেলায় নিরাস করেনি নতুন বইয়ের অপেক্ষায় থাকা পাঠকদের। মেলায় পাওয়া গেছে দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবরের সম্প্রতি প্রকাশিত ভ্রমণকাহিনী ‘দেশে দেশে ভ্রমণ শেষে’। চন্দ্রবিন্দু থেকে বেরিয়েছে বইটি।
এছাড়া গতকাল বইমেলা চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ও সাহাবউদ্দিন মজুমদার সম্পাদিত ‘সংগ্রামে–আন্দোলনে গৌরবগাঁথায় শেখ হাসিনা’ নামক অলোকচিত্র সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।