দৈনিক আজাদীর মূল শক্তি পাঠকসমাজ গৌরবের ৬৬ বছরে জানাই শুভেচ্ছা

| শুক্রবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদী আজ পদার্পণ করলো গৌরবের ৬৬ বছরে। এটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, হকার ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই শুভেচ্ছো। সবার প্রতি থাকলো আমাদের ভালোবাসা। দৈনিক আজাদীকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র। কিন্তু তার জন্ম বাংলাদেশের জন্মের ১১ বছর ৩ মাস ১১ দিন আগে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় লাভের পর ১৭ ডিসেম্বর সকালে প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদী। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘নিরীক্ষা’ সেপ্টেম্বরডিসেম্বর ১৯৯৯ সংখ্যায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তাঁরা আজাদীকে এই স্বীকৃতিটা দিতে কার্পণ্য করেননি। এজন্য প্রেস ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।

দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের সংবাদপত্র। সুদীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত চট্টগ্রামের দুঃখুহাহাকারসংকট আর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে ধরতে এটি পরিণত হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার মুখপত্রে। চট্টগ্রামের জনমানুষের কথা বলার জন্যসর্বোপরি বঞ্চিত ও অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়ে ৬৬ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক আজাদী। আজাদী আজ শুধু একটি সংবাদপত্রই নয়, এটি এখন চট্টগ্রামের আয়না হিসেবেও স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক যখন ৬৬ বছর আগে এ ধরনের একটি কাগজের কথা চিন্তা করেন তখন আসলে দৈনিক সংবাদপত্র এখানে ছিল এক ধরনের কুটির শিল্পের মতো। ছোট্ট ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগুলো প্রকাশিত হতো। সেখানে তিনি যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কল্পনা করেছেন তাকে বলা যায় যে, তিনি এক ধরনের দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং একজন অগ্রনায়কের কাজ করেছেন। পত্রিকাটা যে ৬৬ বছর ধরে টিকে আছে, ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তাতে একভাবে বলা যায় যে, তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। ‘আজাদী’ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মূলত আঞ্চলিক পত্রিকা এবং চট্টগ্রাম যেহেতু বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী, বন্দরনগরীফলে চট্টগ্রামের দেশব্যাপী একটা প্রভাব আছে, ভূমিকা আছে। চট্টগ্রামের জনগণের মুখপত্র হিসেবে ভূমিকা পালনের বিষয়টি আমাদের মনে হয় দেশবাসীও স্বীকার করেন, চট্টগ্রামবাসী তো অবশ্যই।

বিজ্ঞজনরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনকার সূচনা প্রহরে দৈনিক আজাদী পাঠ এবং নির্যাসকে ধারণ করেই চট্টগ্রামবাসীর সুখের নিদ্রায় রাত্রিযাপন পূর্ণতা পায়। ভোরের আলোর প্রত্যাশার সাথেই সম্পৃক্ত থাকে দৈনিক আজাদীর পাঠোদ্ধার। স্বাভাবিকভাবেই এটি চট্টগ্রামের অত্যুজ্জ্বল ঐতিহ্যকৃষ্টিসংস্কৃতির প্রণিধানযোগ্য বাহন হিসেবে সমধিক জনপ্রিয় ও বরণীয়।

দৈনিক আজাদী শহরবন্দর ও গ্রামীণ জনপদের সকল ধরনের সংবাদ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, খেলাধুলা, শিক্ষাসংস্কৃতিসাহিত্য, নৃত্য, বিতর্ক, গান, আবৃত্তি বিশেষ করে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান, গবেষণা, সেমিনারসিম্পোজিয়াম ইত্যকার বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে প্রচার করে থাকে। দলমতধর্মবর্ণলিঙ্গঅঞ্চলগোত্র নির্বিশেষে আজাদীর সমস্ত পরিবেশনা। রুচিশীল কৃষ্টি, ঐতিহ্য, চারুশিল্প, চলচ্চিত্রের প্রকাশ ও বিনোদন প্রকাশের দৃষ্টিভঙ্গিও অনবদ্য। চমৎকারভাবে সুপঠিত এবং সুলিখিত শুধু কালো কালির মধ্যে নয় প্রিয় সংবাদ কর্মী ও সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধকার, প্রতিবেদকের লেখনিতে এই পত্রিকার সত্যনিষ্ঠতার পরিচয় পাওয়া যায়। দৈনিক সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে সমসাময়িক, সাধারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, বিভিন্ন অপরাধমূলক, সামাজিক, সাংগঠনিক সংবাদসহ ইত্যাদি সংবাদসমূহ বিশেষভাবে বিবেচিত। পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ছাড়াও উল্লেখিত নানা সংবাদ দৈনিক আজাদীর বহুমাত্রিক উদ্যোগ যথার্থ কার্যকারিতা পেয়েছে।

বলা যায়, আজাদী চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ভালোবাসার অনন্য আবাসস্থল হিসাবে মনে জায়গা করে নিয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ যারা দেশের বাইরে অবস্থান করছে তারা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের প্রিয় পত্রিকায় চোখ রাখার সুযোগ হচ্ছে। দৈনিক আজাদীর অনলাইন সুবিধা আজাদীপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দেশের খবরের স্বাদ গ্রহণেরও অনন্য সুযোগ বলা চলে।

আজাদী’ আজ কেবল একটা মিডিয়া নয়, এটা বর্তমানে একটা আন্দোলন। এই আন্দোলন হিসাবেই ‘আজাদী’ এই অঞ্চলের মানুষকে নানা সময়ে সংগঠিত করে। যা দেশের জন্য ইতিবাচক। বর্তমান সময়ে প্রয়োজন মানুষের মনে একটা গুণবাচক ও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি করা। এক্ষেত্রে ‘আজাদী’র একটা বিশাল ভূমিকা আছে। আর এটিই হোক ‘আজাদী’র অনুপ্রেরণা। প্রগতিশীল এই পত্রিকাটির মূলধন পাঠকসমাজ। এই পাঠক সমাজই আজাদীকে বাঁচিয়ে রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে