গত ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ আজাদী পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছর। এটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। সবদিক দিয়ে অনিশ্চয়তার এ যুগে একটি পত্রিকার ৬৪ বছরে পদার্পণ আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়।
আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল খালেক হলেন এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার, যিনি নিজের উজ্জ্বল পেশা ছেড়ে লাইব্রেরি, প্রেস ও পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন এ অঞ্চলের পশ্চাদপদ সমাজকে শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে। বিশেষজ্ঞদের লেখা থেকে জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি নেন। চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই তিনি নিষ্ঠা ও সততার পরিচয় দিতে শুরু করেন। শ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি কর্মক্ষেত্রকে পবিত্র করে তুলেন। সহযোগী তড়িৎ প্রকৌশলী থেকে তিনি ক’বছরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়ে যান। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান প্রকৌশলীর পদ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বেশিদিন চাকরি করেননি। মূলত ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি চাকরির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিশ্বাস করেন নি যে, তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। তাই আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ তাকে আরো বড় পদ দিতে চাইলেন। কিন্তু না, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠলেন না। তিনি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পরহিতব্রতে নিজেকে অধিকতর জড়িয়ে রাখার মানসে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। চাকরিতে থাকাবস্থায় ইঞ্জিনিয়ার খালেক ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কোহিনূর লাইব্রেরি এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পী সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশনায় তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা করতেন, অনুপ্রেরণা জাগাতেন। মননশীল সাহিত্য সংকলন প্রকাশের ক্ষেত্রেও তাঁর কোহিনুর প্রেস ছিল উল্লেখযোগ্য। ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক আজাদী প্রতিষ্ঠা করে সংবাদপত্র জগতের পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর সম্পাদক হিসেবে আজাদীর দায়িত্ব নেন আরেক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ২০০৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব নেন বর্তমান সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি সংবাদপত্রকে সবসময় আধুনিক সজ্জায় রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর একান্ত ইচ্ছায় দৈনিক আজাদী পায় প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি পত্রিকায়এনেছিলেন ফটো টাইপ মেশিন। আজাদীর ৬৪ বছরের পথচলায় পর্যায়ক্রমে ‘হ্যান্ড কম্পোজ, লাইনো টাইপ, মনোটাইপ, ফটোটাইপ হয়ে কম্পিউটার সেটআপ’ এর উজ্জ্বল সঙ্গী তিনি। বর্তমানে পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণের পাশাপাশি অনলাইনেও দুটি সংস্করণ রয়েছে তাঁর বদান্যতায়। আজাদী হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। দৈনিক আজাদী নামমাত্র আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও এর চাহিদা সমগ্র বিশ্বব্যাপী। আমি মনে করি, আজাদীর এ সাফল্য অব্যাহত থাকবে। তার অগ্রগতি মানে সাংবাদিক ও পাঠক সমাজের অগ্রগতি।