দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর ও আমার প্রকাশিত প্রথম ছড়া

সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ২:৩৩ অপরাহ্ণ

আমার বয়স তখন ষোল সতর হবে মেট্রিক পাস করে সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। তখন দূরন্ত এই মন রঙিন স্বপ্নে বিভোর। আশানিরাশার মাঝে ছুটে বেড়ায় স্বপ্নে ডানা মেলে আকাশ ছোঁয়া এক অন্য জগতের খোঁজে। তখন লেখাপড়ার মাঝে সিনেমা, গান, আড্ডা ও কিছু ছড়া লেখার প্রতি অতিশয় আসক্ত ছিলাম। রেড়িওতে দুর্বার অনুষ্ঠানে গান শুনা, সিনেমা দেখে হল থেকে বের হবার সময় গানের বইটা কিনে নির্জনে সেই গান গাওয়া, বিয়ের মেহেদি অনুষ্ঠান বা অন্যকোন সামাজিক ক্লাবের অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠান ঘোষণা করা ইত্যাদিতে মেতে থাকতাম। তখন প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস ছিল। দস্যু বনহুর, মাসুদরানা ইত্যাদির পাশাপাশি বড় বড় কবি ঔপন্যাসিকের কবিতা গল্প উপন্যাসের বই পড়তাম। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছড়া কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম।

নিজ বাড়ি কাট্টলীতে বাবার তৈরি করা পাকাদালান। দালানের সামনেই একখানা পাকাদেয়াল আর টিনের চৌচালা দেউড়িঘর। সেখানেই পড়ালেখার পাশাপাশি ছড়া কবিতা ও পত্রমিতালীদের চিঠি লিখতাম।

তবে আমার লেখালেখি স্কুল জীবন থেকে শুরু। তখন জাতীয় দিবসে স্কুলে বা কোন ক্লাবের বিশেষদিনে দেয়ালিকা পত্রিকা বের করা হত। যেমন কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী হাই স্কুল, সবুজ সংঘ, উপল, শতদল, কাট্টলী পাঠাগার, উদয়ন, সততা এই সমস্ত ক্লাবের দেয়ালিকায় ছড়া কবিতা পাঠাতাম এবং তা ছাপছে জানতে পারলে দেখতে যেতাম এবং খুব খুশি হতাম। আমার লেখা ভালো হয়েছে বলে বড়দের অনেকেই পত্রিকায় লিখতে উৎসাহ দিতেন। এই উৎসাহে নিজের মধ্যে আগ্রহ জম্মাল। তখন দৈনিক আজাদীতে আগামীদের আসরে সভ্য হবার জন্য সভ্য কূপনটি পূরণ করে পাঠালাম এবং দেখি দুসংখ্যা পরই আমি আগামীদের আসরের সভ্য হলাম, আমার সভ্য নম্বর ছিল ৩৬৪৪। পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম ঠিকানা দেখে আনন্দে আমি আনন্দে আত্মহারা এবং তাতে নিজের লেখা ছড়া পাঠানোর উৎসাব আকাঙ্ক্ষা আরো শতগুণ বেড়ে গেল।

যতদূর মনে ১৯৭৬ সাল। সামনে ঈদুল ফিতর। এই ঈদ উপলক্ষ্যে দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসরের ঈদ সংখ্যায় একটা ঈদের ছড়া পাঠালাম। সেই ছড়াটি হল

ঢল নেমেছে ঈদের খুশির

শিমুল তলীর গাঁয়

খোকা খুকু ছুটছে সবাই

নতুন জুতো পায়।

হরেক রকম পোষাক পরে

যাচ্ছে ঘরে ঘরে

সেলাম করে মিষ্টি খাবে

পেটটি ভরে ভরে।

সবার আজি প্রাণটি খুলে

মাতা মাতি চাই

একে একে হাত মিলিয়ে

মিতালী গান গাই।

তৎকালীন সময়ে দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসরের ভাইয়া ছিলেন সম্ভবত লেখক ও সাংবাদিক প্রয়াত আতাউল হাকিম। তখন আজাদীকে বলা হত চট্টগ্রামের ইত্তেফাক। সেই আজাদীর আগামীদের আসরের ঈদ সংখ্যায় আমার পাঠানো ছড়া ছাপা হল তা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। বার বার দেখছি আর পড়ছি। আমার আনন্দ আর খুশিতে পুরো জগৎ যেন দুলছে। সেই পত্রিকার আরো একটি কপি সংগ্রহ করলাম। সযত্নে রাখলাম এবং কদিন পর পর তা দেখতাম। সেই থেকেই দৈনিক আজাদী, কিশোর বাংলা, জামানা, সংবাদ, দেশবানী, বিভিন্ন পত্রিকা ও সংকলন, লিটন ম্যাগাজিনে ছড়া কবিতা লিখতে শুরু করলাম এবং বেশ ছাপা হত। সেই ১৯৭৬ ৮৪ সাল, ইন্টার থেকে মাস্টার্স অর্থাৎ চাকরি জীবনে ঢুকার আগ পর্যন্ত প্রায় লিখেছি। কিছু লেখা কাটিং করে বাসায় রাখতাম। আর সবচেয়ে বেশি লেখার পত্রিকা সেই দেউড়ি ঘরে রাখাছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৯৯১ সালের ২৯ আগস্ট প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আমার উপকূলীয় এলাকা কাট্টলীতে ৪/৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয় এবং বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তাতে আমার দেউড়িঘর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে লেখাগুলো জলোচ্ছ্বাসের জলে ভেসে যায়।

মূল্যবান লেখাগুলো হারানোর কষ্ট এখনো মনকে পীড়া দেয়। দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর দেশে বহু খ্যাতিমান ও নামকরা কবি সাহিত্যিক সৃষ্টি করেছে। আগামীদের আসরের জন্য শুভ কামনা রইলো।

লেখক : কবি, ছড়াকার; সাবেক জনসেংযোগ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদৈনিক আজাদী ও আক্ষেপ পূরণের গল্প
পরবর্তী নিবন্ধকিশোরবেলার প্রথম প্রেম