সাড়ে ৩ মাস চুনতী অভয়ারণ্যে থাকার পর আবারও আনোয়ারা দেয়াং পাহাড়ে ফিরেছে হাতির দল। ৭ বছর ধরে কেইপিজেড ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে তান্ডব চালানো হাতির পালটি ফেরার সাথে সাথে লোকালয়ে হানা দিতে শুরু করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, হাতির এই উৎপাত শিল্পায়নে একটি বাধা হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ৭ বছরের বেশি সময় ধরে বন্য হাতি তান্ডব চালিয়ে নারী, শিশুসহ ২৪ জনকে হত্যা করে। পাশাপাশি এ সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ ২ শতাধিক মানুষকে আহত করেছে। গত ১০ এপ্রিল শনিবার রাতে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে যাওয়ার সাড়ে ৩ মাস পর হাতিগুলো গত ২০ জুলাই আবারো আনোয়ারায় ফিরে এসে রাতের আঁধারে তান্ডব চালাচ্ছে। এতে আবারো সর্বত্র আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গত তিনদিনে হাতিগুলো রাতের আঁধারে হাজিগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্প, বৈরাগ, গুয়াপঞ্চকসহ বিভিন্ন গ্রামের স্থানীয়দের বসতবাড়িতে হামলা করে। তাছাড়া কেইপিজেড শিল্পজোনের সবুজায়ন প্রকল্পে ব্যাপক গাছপালা বিনষ্ট করেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বৈরাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও হাতি নিরাপদে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে নিতে আন্দোলনকারী নেতা এডভোকেট নুরুল আজিম জানান, গত ৭ বছরের বেশি সময় ধরে চুনতি অভয়ারণ্যে থেকে এসে একদল দলচুট হাতি আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে রাতের আঁধারে আনোয়ারা–কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খাবারের সন্ধ্যানে নেমে তান্ডব চালিয়ে ২৪ জন নিরীহ মানুষ হত্যা করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী–শিশু ও বৃদ্ধা। হাতি আক্রমণ চালিযে স্থানীয়দের বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ হাজার হাজার টাকার সম্পদ নষ্ট করে। হাতিগুলো সরিয়ে নিতে সরকারের বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনে বারবার আবেদন করেও কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না দেখে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে হাতিগুলো ফিরিয়ে নিতে আন্দোলনে নামে আনোয়ারা কর্ণফুলীর ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ। টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে পথসভা, মানববন্ধন, স্বারকলিপি প্রদান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেও হাতি সরিয়ে নিতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এরই মধ্যে গত ১০ এপ্রিল রাতের আঁধারে হাতিগুলো চুনতি অভায়ারণ্যে ফিরে যায়। আর হাতিগুলো ফিরে যেতে সহায়তা করেন ইআরটি টিম আনোয়ারা। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে। টানা সাড়ে তিন মাস হাতিগুলো চুনতি অভয়ারণ্যে অবস্থান করে গত ২০ জুলাই রাতে আবারো আনোয়ারায় ফিরে এনে তান্ডব শুরু করে। আর হাতি আসার খবরে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কেইপিজেডের উপ–মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান জানান, হাতিগুলো সাড়ে ৩ মাস পর আবারো ফিরে আসা মানে আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। হাতির কারণে কেইপিজেড অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ৩৫ হাজার শ্রমিকের যাতায়াত ব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে।
বাঁশখালী জলদী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, প্রায় সাড়ে ৩ মাস আনোয়ারা থেকে হাতিগুলো সরে গিয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২০ জুলাই তিন–চারটা হাতি আবারো আনোয়ারায় ফিরে আসে। বর্তমানে হাতিগুলোর জন্য গঠিত ৫০ সদস্যের ইআরটি টিম রাতে পাহারা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।