দেড় লাখ টিকাগ্রহীতার ২য় ডোজ নিয়ে শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

প্রথম ডোজ নেওয়া প্রায় দেড় লাখ করোনার টিকাগ্রহীতার ২য় ডোজ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ভর করেছে চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে টিকার পরবর্তী চালান না পেলে ১ম ডোজ নেওয়া এসব টিকাগ্রহীতা যথাসময়ে তাদের ২য় ডোজ পাবেন না। এতে করে পুরো টিকাদান কার্যক্রমে সংকট দেখা দিতে পারে। সম্ভাব্য এ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় চালানে প্রথম চালানের ৭০ ভাগ টিকা পেয়েছেন জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, প্রথম চালানের তুলনায় ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ টিকা কম এসেছে। চুক্তি মোতাবেক প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে টিকা এলে সমস্যা থাকবে না। আমরাও পাব। তবে প্রত্যাশিত সময়ে ভারতের টিকা পাওয়া না গেলে কেবল চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশেই টিকাদান নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৯ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। সে হিসেবে প্রথম ডোজ নেওয়া সব টিকাগ্রহীতার ২য় ডোজ পেতে হলে অন্তত সাড়ে চার লাখ ডোজ টিকা প্রয়োজন। কিন্তু ২য় চালানে চট্টগ্রামে টিকা পাওয়া গেছে ৩ লাখ ৬ হাজার ডোজ। অর্থাৎ কেবল প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের জন্যই প্রায় দেড় লাখ ডোজ টিকার সংকট রয়েছে। তাছাড়া এখনো প্রথম ডোজ টিকাদান অব্যাহত রয়েছে। এতে করে ২য় ডোজ হিসেবে প্রয়োজনীয় টিকার সংখ্যাটা দিন দিন বড় হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জেলায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৯ জন প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২য় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৩ জন। হিসেবে আরো ২ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৬ জন ২য় ডোজ টিকা গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু মহানগরসহ জেলায় সব মিলিয়ে মজুদ রয়েছে এক লাখের সামান্য বেশি ডোজ। অর্থাৎ আরো প্রায় দেড় লাখ টিকার সংকট রয়েছে চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে টিকার পরবর্তী চালান না পেলে এই দেড় লাখ টিকাগ্রহীতা যথাসময়ে তাদের ২য় ডোজ টিকা পাবেন না।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত টিকা পাওয়া গেছে ৭৬ হাজার ৩৫৫ ভায়াল। প্রতি ভায়ালে ১০ ডোজ হিসেবে টিকার মোট ডোজ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫০ ডোজ। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ব্যবহার হয়েছে ৬৪ হাজার ৮১৫ ভায়াল বা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৫০ ডোজ। হিসেবে মহানগরসহ জেলায় আর টিকা মজুদ রয়েছে ১১ হাজার ৫৪০ ভায়াল বা ১ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ ডোজ। মজুদ থাকা লক্ষাধিক ডোজ শেষ হলে পুরো টিকাদান কার্যক্রম সংকটে পড়তে পারে চট্টগ্রামে। অবশ্য, এখন দৈনিক ১০ হাজারের বেশি ডোজ টিকাদান চলছে পুরো জেলায়। সে হিসেবে মজুদ থাকা লক্ষাধিক টিকা দশ দিনের আগেই শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দশ দিনের মধ্যে নতুন টিকার চালান পাওয়া যাবে, এমন আশার বাণী শোনাতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, টিকার ২য় ডোজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিতে পারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায়। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী জানান, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭২ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৮ জন। আর ২য় ডোজ নিয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৩৪ জন। হিসেবে প্রথম ডোজ টিকাগ্রহীতার মধ্যে আরো ১ লাখ ৫৬ হাজার ২০৪ জন ২য় ডোজ গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সব মিলিয়ে টিকা মজুদ রয়েছে ৫ হাজার ৪০১ ভায়াল বা ৫৪ হাজার ১০ ডোজ। অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২য় ডোজ গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা দেড় লাখ টিকাগ্রহীতার মধ্যে ৫৪ হাজার টিকাগ্রহীতা তাদের ২য় ডোজ পাবেন। বাকি আরো এক লাখ ২ হাজার ১৯৪ জনের টিকার ২য় ডোজ পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। যদিও সরকারের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় ভারত কিংবা ভিন্ন কোনো দেশ থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে আশাবাদী চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের মজুদ শেষ হতে হতে দেশে আরো টিকা আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, উপজেলা পর্যায়ে এ পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬২০ জন। এর মধ্যে ২য় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯৪ হাজার ১১৬ জন। হিসেবে আরো ১ লাখ ৫ হাজার ৫০৪ জন টিকার ২য় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু উপজেলাগুলোতে বর্তমানে সব মিলিয়ে মজুদ রয়েছে ৬ হাজার ১৫৬ ভায়াল বা ৬১ হাজার ৫৬০ ডোজ টিকা। অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ে ৪৩ হাজার ৯৪৪ জন টিকাগ্রহীতার ২য় ডোজ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে। মোট ৩৫ হাজার ৮০৯ ভায়াল বা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯০ ডোজ টিকা বরাদ্দ পায় উপজেলাগুলো। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ব্যবহার হয়েছে ২৯ হাজার ৬৫৩ ভায়াল বা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫৩০ ডোজ। আর ৬ হাজার ১৫৬ ভায়াল বা ৬১ হাজার ৫৬০ ডোজ টিকা অবশিষ্ট রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টিকা গ্রহীতার ২য় ডোজ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ভর করেছে। এর মধ্যে চসিক এলাকায় লক্ষাধিক টিকাগ্রহীতা এ সংকটে পড়তে পারেন। আর উপজেলা পর্যায়ে ২য় ডোজ নিয়ে সংকটে পড়তে পারেন প্রায় অর্ধ লাখ টিকাগ্রহীতা।
প্রসঙ্গত, গতকাল পর্যন্ত মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় টিকা গ্রহণে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে চসিক এলাকায় নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩৩ জন। উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪০।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধচুনতিতে বনবিটের অর্ধশত গাছ কেটে সাবাড়