নগরে ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার জন্য ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) অনুরোধ করে সিডিএ। এর ৮ বছর পর ২০১৩ সালে রাজধানীর রানা প্লাজা ট্রাজিডির পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে অভিযান শুরু করে চসিক। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সিডিএ নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হালনাগাদ করেনি। আবার চসিকের কার্যক্রমও স্থির ছিল। তবে সম্প্রতি দেশে বার বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় নড়চড়ে বসে চসিক–সিডিএ দুই সংস্থায়। নগরে ১০২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে তা চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ। এরপ্রেক্ষিতে চসিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে গতকাল সোমবার ৫ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করে।
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বের তালিকা থেকে ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয় ৬টি ভবন। ওই হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকার কথা ৫১টি। কিন্তু সাম্প্রতিক তালিকায় তা বেড়ে ১০২–এ উন্নীত হয়। অর্থাৎ দেড় যুগের ব্যবধানে নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
চসিককে দেয়া সিডিএর সাম্প্রতিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকাভুক্ত ভবনগুলোর মধ্যে ৬৮টি আবাসিক ও ১২টি বণিজ্যিক ভবন রয়েছে। ১৩টি ভবন আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইভাবেই ব্যবহার হয়। এছাড়া ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১টি মার্কেট ও ১টি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। তালিকায় বাকলিয়ার একটি, শুলকবহর এলাকার ২টি এবং মোমিন রোডের একটি ভবনের নাম থাকলেও ভবনগুলো বাণিজ্যিক নাকি আবাসিক তা উল্লেখ করা হয়নি।
তালিকার তথ্য অনুযায়ি, ঝূঁকিপূর্ণ ভবনের অনেকগুলো ৫০ থেকে ১০৫ বছরের পুরনো। কিছু ভবনের মেয়াদ চলে গেছে। ভূমিকম্প ও অন্যান্য কারণেও একপাশে কাত বা হেলে পড়েছে কয়েকটি ভবন। হেলে পড়া ভবনের মধ্যে কিছু রয়েছে কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত। এছাড়া কিছুৃ পুরাতন ভবনের কাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। দেয়ালের বীম ও দেয়ালে রয়েছে ফাটল। ফলে যে কোনো সময় ভবনগুলো বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।
তালিকায় রয়েছে আগ্রাবাদ মৌলভী পাড়া আবদুস ছোবহান সওদাগর–এর মালিকানাধীন ছোবহান ভবন। ভবনটি ১৭ বছর পূর্বে কাত হয়ে একদিকে হেলে পড়ে। বারিক বিল্ডিং মোড়ে মো. রফিকের আবাসিক–বাণিজ্যিক ভবনের পুরাতন অবকাঠামো ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। রহমতগঞ্জের নূর নাহার বেগমের ভবন একপাশে হেলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
এছাড়া ৬০ থেকে ৭০ বছর পূর্বে নির্মিত নাসিরাবাদ টিটিসি বিল্ডিং (প্রশাসনিক ও ওয়ার্কসপ সেকশন)-ও রয়েছে ঝুঁকির তালিকায়। ভূমিকম্পে ভবনটি বিধ্বস্ত হয় বলে উল্লেখ করা হয় তালিকায়। তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– নন্দনকাননের পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়, মোহরা এ এল খান উচ্চ বিদ্যালয় ও কোতোয়ালীর ঘাটফরহাদবেগ সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়। ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে রেয়াজুদ্দিন বাজারের দারুল ফজল মার্কেটও।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা পাওয়ার পর করণীয় নির্ধারণে গতকাল সোমবার চসিকের বৈঠকে বসেন চসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন। বৈঠকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের বিষয়ে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক হচ্ছেন চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ। এছাড়া চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সোয়েব উদ্দিন খানকে সদস্য সচিব এবং সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটি চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন আজাদীকে বলেন, আমরা কমিটি গঠন করেছি। কাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিকদের নোটিশ দেয়া হবে। তাদের নিজ উদ্যোগে ভাঙতে বলা হবে। অন্যথায় আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কাল আমরা সিডিএ’কেও একটি চিঠি দেব। কোন গ্রাউন্ডে ঝুঁকিপূর্ণ করা হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য চাইব। কারণ, নোটিশ দেয়ার পর ভবন মালিকরা এলে তাদেরও একটা বক্তব্য থাকবে। সেটা আমরা মিলিয়ে দেখব। যাতে অন্যায়ভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করব।
এদিকে সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নগরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১১টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা ভবন রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৫টি। ২ থেকে ৫ তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে ৯০ হাজার ৪৪৪টি। ৬ থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ভবনের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৩৫। ১০ তলার ওপরে ভবন রয়েছে ৫২৭টি। নগরে এখন ২০ তলার বেশি ভবন রয়েছে ১০টি। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্পে ঝুঁকি মূল্যায়ন নিয়ে করা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভবন ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার (মূলত একতলার ঊর্ধ্বে ভবনগুলোকে জরিপের আওতায় আনা হয়েছিল)। এর মধ্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫০টি ভবন, যা মোট ভবনের ৯২ শতাংশ।









