দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে না

অর্থসংকটে প্রকল্প স্থগিত

| মঙ্গলবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই লাখ নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্পটি বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। খবর বিডিনিউজের। নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত পেয়েছি। এ মুহূর্তে প্রকল্পটি তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ করছে না। বাতিল হচ্ছে না,তবে এ মুহূর্তে হচ্ছে না। আগামী নির্বাচন আয়োজনের যে পরিকল্পনা ইসি সাজিয়েছে, তাতে অর্ধেক সংসদীয় আসনে (১৫০টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণের ভাবনা ছিল। সেই লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ইভিএম ক্রয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছরের অক্টোবরে এ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনাও হোঁচট খেল। তবে ইসির হাতে এ মুহূর্তে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০৬০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি চলবে বলে নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য।

পরিকল্পনা কমিশন রোববার ইভিএম নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে জানায়। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে তা উপস্থাপন করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ইভিএম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানোর পর কিছু তথ্য সংযোজন করতে বলা হয়েছিল। ইসির সিদ্ধান্তের আলোকে পরিকল্পনা কমিশনে তা পাঠানোও হয়েছিল। পরে পরিকল্পনা কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ইভিএম প্রকল্পটি এবার হচ্ছে না। ইভিএম প্রকল্পটির বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপতত প্রক্রিয়াকরণ না করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কমিশন বলেছিল নতুন মেশিন পেলে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নতুন ইভিএম না পেলে ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যত আসনে সম্ভব ইভিএমে ভোট হবে। সে সিদ্ধান্ত বহাল আছে।

কমিশনের হাতে এখন অন্তত দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম দিয়ে ৫০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে।

ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১৯ অক্টোবর ৮ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। এক দফা ফেরত আসার পর সংস্কার করে পুনরায় পাঠানো হয় প্রস্তাব।

অধিকাংশের প্রত্যাশা পূরণ হলো : সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান গতকাল বলেন, আমাদের কাছে যতগুলো কার্যকর ইভিএম আছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করব। এ লক্ষ্যে মজুদ থাকা ইভিএমের কোয়ালিটি চেক করা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সব কিছুই রোডম্যাপ অনুযায়ী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি জানান, কমিশন পাঁচশর বেশি নির্বাচন ইভিএমে করেছে। তথ্য বিশ্লেষণ করে অনুধাবন করেছে যে, ইভিএমে কোনো প্রকার কারচুপি ছাড়াই ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রার্থীরা ইভিএমের ফলাফল নিয়েও অভিযোগ করেননি। এজন্য অনুর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। অনেক সাধের সাথে সাধ্যের সমন্বয় হয় না, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে দিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশা পূরণ হলো।

এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

ইভিএম নিয়ে কাদের যা বললেন : বাসস জানায়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সামর্থ্য অনুযায়ী যে কয়টা আসনে ইভিএম দিতে পারবে আওয়ামী লীগ তা মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম চাই। তবে কমিশন সামর্থ্য অনুযায়ী যা করতে পারবে তা আমরা মেনে নেব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গতকাল বিকালে রাজধানীর মিরপুর১০ নম্বর গোলচত্বর সংলগ্ন কচুক্ষেত রোডে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কাদের বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগের সাথে রয়েছে, বিএনপির সাথে নেই। টেমস নদীর পাড় থেকে আসা অদৃশ্য নির্দেশে চলা বিএনপি রাজনীতিকে নষ্ট করেছে। এর অবসান হতে হবে। এ থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে বিএনপি কখনো আন্দোলন ও নির্বাচনে সফল হবে না। বিএনপিকে ‘গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ হত্যাকারী’ অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা কী করে রাষ্ট্র মেরামত করবে যারা এক কোটি ভুয়া ভোটার, ভুয়া ভোটের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্র মেরামত করবে শেখ হাসিনার সরকার। এদেশে প্রথম নির্বাচন কমিশনকে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছে তাঁর সরকার।

দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা বিএনপি ধ্বংস করেছে দাবি করে তিনি বলেন, তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আর মেরামত করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব সংকটে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো যেখানে সংকটে সেখানে বাংলাদেশের সুনাম করছে অনেকেই।

সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ লাখ শীতবস্ত্র দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শীতে মানুষ কষ্টে আছে। আমরা মানুষের পাশে আছি। মানুষের যেকোনো কষ্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।

আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বিএনপি সহ্য করতে না পেরে অন্তর্জ্বালায় ভুগছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, আমাদের অন্তর্জ্বালা নাই। আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই, তাদের আন্দোলন দেখেই বোঝা যায়। বিএনপির ভুয়া আন্দোলন থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়েছে।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, ডোনাল্ড লু আসার পর বিএনপি নেতারা হাসপাতালে কেন গিয়েছে? অদৃশ্য নির্দেশে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার মিশনে বিএনপি আন্দোলন করেছিল। তারাই দেশে নষ্ট রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। এই পথ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কখনোই আন্দোলনে সফল হবে না। নির্বাচনেও সফল হবে না বিএনপি। তারা ভণ্ডামির রাজনীতি করছে। নির্বাচন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহ্যাক করে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু, চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধমন্ত্রণালয়ে আটকা ভূমি অধিগ্রহণের ফাইল