দেশ হতে দেশান্তরে

সেলিম সোলায়মান | রবিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ
হ্যাঁ বেশ কিছুক্ষণ আগে আদিমানব পিকিং মানবের দেশে, আধুনিক বেইজিং শহরে এসে পা রাখলেও এই প্রথম তার বাতাস গায়ে লাগতেই অবস্থা আমার যা হলো, সেটিকে বরফবৎ না প্রস্তরবৎ বলা ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ হবে তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ কোথায়? কারণ ঐ হিমে ভাবনাও তো জমে প্রস্তরবৎবরফ হয়ে গেছে! আর এ মুহূর্তে ব্যাকরণগত শুদ্ধতা বেশি প্রয়োজন নাকি আত্মরক্ষাগত শুদ্ধতা বেশি দরকারি তাও তো ভাবতে পারছি না! কারণ ঐ যে বললাম মগজের নিউরনও তো জমে গেছে বেইজিং হিমে, ফলে ঐ পথে ভাবনারাও দৌড়ঝাঁপ বন্ধ করে হয়ে গেছে নটনড়নচড়ন! কিন্তু তারপরও আমার এই কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ অবস্থাটিকে গা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে প্রথম যে ভাবের উদয় হলো মনে, তা হলো উচ্চতর প্রাণীর জীবনসংগ্রামের অন্যতম প্রণোদনা, সন্তানবাৎসল্য! দ্রুত তাই ঘাড় ফিরিয়ে পুত্রদের উদ্দেশ্যে বেশ জোরের সাথে হড়বড় করে যে কথাগুলো উচ্চারণ করতে পারলাম তা হলো :‘খবরদার বাবারা তোমরা এসো না, ঢুকে যাও ঢুকে যাও ভেতরে’ বলেই নিজেও পা বাড়ালাম, আগমনী লাউঞ্জের উষ্ণতার ভেতরে ঢুকে যেতে ফের। কিন্তু তীব্র সন্তানবাৎসল্যসুলভ আমার ঐ কথাগুলো ওদের কানে পৌঁছুনর আগেই তো পুত্ররা নেমেই পড়েছিল রাস্তায় বেইজিং হিমঝাপটার মুখে! অতএব দ্রুত দুজনকে বগলদাবা করে ফের ঢুকে গেলাম লাউঞ্জে।
লাউঞ্জের উষ্ণতায় ঢোকার পরই টের পেলাম পিতাপুত্র তিনজনেই কাঁপছি আমরা কিয়ৎকাল্পুর্বের বেইজিং হিমঝাপটার ধাক্কায়, যা নাকি টের পাইনি এতোক্ষণ। আসলে টের পাবো কিভাবে? ঐ যে বললাম না শরীরের গোটা স্নায়ুতন্ত্রই তো জমে প্রস্তরবরফাবৎহয়ে গিয়েছিল। ফলে আমাদের তিন জনেরই অবস্থা হয়েছে কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ। এদিকে অভ্র দীপ্র অনবরত হাত নাড়তে নাড়তে আউড়ে যাচ্ছে ‘ও মা,কি ঠাণ্ডা, কি ঠাণ্ডা’! আসলে তীব্র ঠাণ্ডার কামড় আমাদের জামা কাপড় অবহেলায় উপেক্ষা করে সারা শরীর জমিয়ে দিলেও মূল কামড়টি দিয়েছে আমার মতোই ওদেরও হাতমোজাহীন খোলা হাতের তালু আর আঙুলগুলোতে।

এদিকে আমাদের ওইরকম তড়িঘড়ি ফিরে আসা দেখে, লাজু আর হেলেনের যুগল গলার উদ্বিগ্ন যাবতীয় প্রশ্নরা তীরের মতো ছুটে এলো শুধু ‘কি হলো, কি হলো’? এ দুই শব্দে বন্দি হয়ে! কিন্তু ওদের ঐ উদ্বিগ্নব্যাকুল জিজ্ঞাসায় কর্ণপাত করার অবকাশ কোথায়? ব্যস্ত হয়ে পড়লাম দ্রুত দুপুত্রের দুই হাতের তালু ঘষে দেয়ায়। হাতেকলমে দেখিয়ে দেয়ার সাথে মুখেও বললাম ওদের যাতে ওরা নিজেরাই নিজেদের হাতের তালু ঘষে গরম করে নেয়। অতঃপর নিজের হাতের তালু একটার সাথে আরেকটাকে জোরে ঘষতে ঘষতে, লাজুর পাশে গিয়ে বসতে বসতে বললাম, বাইরে ভয়ংকর হাবিয়া ঠাণ্ডা! প্লেন থেকে নামার আগেও তোমাদের বলেছিলাম অতিরিক্ত কাপড় পরে নিতে , তা তো করোনি, এখন আর দেরি না করে পরে নাও তা। ‘কে বললো পরিনি ,এই যে দেখো এখানে বসে বসেই তো পরলাম বলে’, লাজু তার গায়ে চড়ানো অতিরিক্ত সুয়েটারটি দেখালো।
তাতেও হবে না, এই আমাদের চায়নাভ্রমণ পরিকল্পনার প্রস্তুতি হিসাবে, বংগবাজার ঘুরে ঘুরে যে তোমার ওভার কোটটি কিনেছিলাম সেটি কোথায়? সেটি চড়াও গায়ে, বলেই উঠে গেলাম পাশে রাখা ব্যাগেজ বোঝাই আমাদের ট্রলি দুটোর দিকে, দীপ্র অভ্রর সুটকেস দুটো নামানোর জন্য। প্লেন থেকে নামার আগে, ওদেরকে যদিও জ্যাকেটের নীচে একটা করে সুয়েটার পরিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতে যে বেইজিং শীতের কামড় থেকে রক্ষা পাবে না ওরা তা তো বুঝে গেছে। কারণ ঐ সুয়েটারগুলো হল আজকালকার চলতি ফ্যাশনের নকল উলের, যেগুলোতে দেশের শীত অবলীলায় পরাজিত করা গেলেও কানমিং এর শীতেও তা অচল ছিল, তাই আমরা সবাই তার উপর জ্যাকেট পরেছি এতোদিন। তাতে চলেও গেছে। প্লেনে বসে সেই সুয়েটারের উপর আমি যেমন আরেকটা অতিরিক্ত সুয়েটার পরে তারপর জ্যাকেট চাপিয়েছিলাম, তেমনি করেছিলাম তাদেরও। কিন্তু তাতেও তো শেষ রক্ষা হয়নি।
অতএব আসল উলের যে সুয়েটারগুলো আছে আমাদের সেগুলোও চাপাতে হবে বুঝতে পারছি, আছে যেগুলো ক্যাবিন ব্যাগ মাপের চাকা লাগানো সুটকেসগুলোতে। এখন ঐ উলের সুয়েটারগুলো বের করতেই হবে। তবে সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে বংগবাজার ঘুরে ঘুরে কেনা হাতমোজা গুলো বের করা, যেগুলোর কোনই দরকার পড়েনি এ ক’দিন কানমিং এ। কানমিং এর ঠাণ্ডা, ঢাকার অতিবিরল হীমতম শীতের চেয়েও অনেক বেশি হলেও, সেই শীতের পারদ থার্মোমিটারের শূন্যের চার পাঁচ ঘর উপরেই ছিল। কিন্তু একটু আগের চকিত অভিজ্ঞতায় বুঝতে পেরেছি এইখানের ঠাণ্ডা নিশ্চিত শূন্যের নীচে; তবে তা শূন্যের ক’ঘর নীচে তা এখনো ঠাহর করতে পারিনি। নিজের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায় আমার সর্বনিম্ন ঠাণ্ডার অভিজ্ঞতা হলো মাইনাস ৫/৬ ডিগ্রি। তবে তাতে তো আমার কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ অবস্থা হয়নি, হয়েছে যা এখানে। অতএব ঠাহর করতে পারছি না, এখানকার তাপমাত্রা না, বলা উচিত হীমমাত্রা পারদকে টেনে কতো নীচে নামিয়েছে থার্মোমিটারে! এদিকে নিজ আর পুত্রদ্বয়ের ছোট চাকালাগানো ব্যাগ তিনটা এয়ার পোর্টের ট্রলি থেকে নামানোর আয়োজন করতেই শুনলাম হেলেন বলছে-‘দাদা আমার ট্রলি ব্যাগটাও একটু নামিয়ে দে’। ওর কথার জবাবে ওরই দিকে তাকাতেই দেখলাম, শীতের ব্যাপারে অতি সতর্ক হেলেন ইতিমধ্যেই নিজেকে একাধিক সুয়েটার, মাফলার, টুপি, হাতমোজা আর জ্যাকেটে এমনভাবে মুড়িয়ে ফেলেছে যে , তাতে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমাদের দলে একমাত্র সে-ই প্রস্তুত পিকিং শীত মোকাবেলায়। কিন্তু তারপরও আমাদের পিতাপুত্র তিনজনের ওরকম নাকাল অবস্থায় ফিরে আসা দেখে , ও সম্ভবত ঘাবড়ে গেছে। অতএব দীপ্র অভ্র আর আমার নিজের ছোট ব্যাগগুলো নামানোর সাথে ওর সুটকেসটাও ট্রলি থেকে নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই, ‘এই শোন কিছু মনে করো না আমার বড় সুটকেসটাও নামিয়ে দেও না’ মিন মিন গলায় বলে উঠলো লাজু।
মানে কি এর, অতো ভোমা সাইজের সুটেকেসে কি রেখেছো? গতরাত থেকেই তো বারবার বলেছি বেইজিঙের শীতের জন্য বাড়তি গরম কাপড় হাতের কাছাকাছি রাখতে, তা তো পাত্তাই দাও নি মনে হচ্ছে। এটুকু বলেই সামলালাম নিজেকে। ভাবলাম আসলেই কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ হয়ে যাবতীয় বাহ্যজ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছি মনে হয়! আর না হয় অলঙ্ঘনীয় স্ত্রীআজ্ঞার বিপরীতে চরম ঝুঁকি নিয়ে গজ গজ করে কথা বললাম কোন সাহসে? অতঃপর বিনাবাক্যব্যয়ে যার যার চাহিদা মতো সব সুটকেস ট্রলি থেকে নামিয়ে এনে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, ঐসব থেকে খুঁজে এ মুহূর্তের কাঙ্ক্ষিত ঠাণ্ডানিদানের সাজসরঞ্জাম বের করায়।
আমাদের সবার প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো দ্রুতই পাওয়া গেলেও, লাজুর ভোমা সুটকেসে দেখা গেল যে তার হাতমোজা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গতরাতে তার স্বভাবমাফিক পরম যত্নে প্রতিটি কাপড় ভাঁজ ভাঁজ করে রাখা সাজানো গোছানো সুটকেসটিতে সে যখন সন্তর্পণে হাতমোজা খুঁজতে ব্যস্ত, তখন ভাবনা এলো যে, এয়ারপোর্টে বসে এভাবে একাধিক বাক্স পেটরা হাট করে খুলতে অন্যসময় হলে নিশ্চিত আমার প্রচণ্ড সঙ্কোচপ্রসূত বিরক্তি উৎপাদিত হতো। কিন্তু এখন তা লাগছে না কেন? সাথে সাথেই প্রশ্নটার দ্বিবিধ উত্তর মনে হলো। যার প্রথমটি হলো যে, একটু আগের শীতের তুমুল ঝাপ্টায় নিশ্চয়ই আরো অনেক বোধের মতোই আমার এই ফালতু বোধটিও ভোঁতা হয়ে গেছে এক্ষণে। দ্বিতীয়ত এই ঢাকার সদরঘাট মার্কা ফকিরি চেহারার এই এয়ারপোর্টের এই জায়গাটায় এই মুহূর্তে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। অতএব ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ বলার মতো কেউ নাই আশেপাশে।তাতে মনে হলো স্কুলেপড়াকালীন সময়ে ‘সাপেবর’ বাগধারাটি নিয়ে নিজে নিজে বাক্য রচনা করতে গিয়ে হিমসিম খেলেও,এমুহূর্তে একটা চমৎকার লাগসই বাক্য মনে পড়লো, যা হল
বেইজিং এয়ারপোর্টের এই শুনশান আর ফকিরি অবস্থায় প্রথমে তুমুল হতাশ হলেও, এখন নিরুদ্বেগে আমাদের সুটকেস খুলে আঁতিপাঁতি করে লাজুর হাতমোজা খোজার জন্য তা সাপে বর হয়েই দাঁড়ালো ।
এসময় আমার সেই কিংকর্তব্যপ্রস্তরবরফাবৎ অবস্থার বরফ আরো কিছুটা গলতেই মনে হলো যে, আচ্ছা অতিরিক্ত একটা করে উলেন সুয়েটারতো বের করলাম আমাদের তিনজনের গায়ে চড়ানোর জন্য, তা না হলেও তো খুব একটা কিছু যেতো আসতো না। হাতমোজা বের করা যেমন অবশ্য করণীয় আর মহাজরুরি ব্যাপার ছিল, তেমনি মহাজরুরি না হলেও বেশ জরুরি আরেকটা জিনিষ বের করা দরকার ছিল সুটকেস থেকে তা হলো, প্যান্টের নীচে পরার উলেন থার্মাল আন্ডারওয়ার। কারণঐ ভয়াবহ হাবিয়া ঠাণ্ডা সবচেয়ে তীব্র কামড়টি আমাদের খোলা হাতের তালু আর আঙুলে বসালেও,পায়ের দিকটাতেও কম বসায়নি তার তীক্ষ্ণ নখর ।
হ্যাঁ এ ক’দিন কানমিং আমরা সবাই নিম্নাঙ্গে সুতি থার্মাল আন্ডারওয়ার পরে বেশ কাটালেও, উলেন থার্মালগুলো আছে এখনো সেই আমার ভোমা সুটকেসেই। গতরাতে হোটেলে যখন সুটকেস গোছাচ্ছিলাম তখন মনেই পড়েনি সেটা বের করার কথা। কারণ ভাবিইতো নি যে, এয়ারপোর্টে নেমেই এমন একটা অবস্থায় পরবো। অবচেতনে তো সবসময়ই ভাবছিলাম যে, এখানে এসে আগমনী লাউঞ্জের ভেতর থেকেই ভ্যান হোক আর বাসের টিকিট হোক তা কেটে দ্রুত উঠে যাবো ভ্যানে বা বাসে। অতএব বেইজিং শীত যতই বেয়াড়া হোক, আমাদের নাগাল সে আর পাচ্ছে না তেমন। কিন্তু এখন তো ঘটনা ঘটে গেল উল্টা। ভ্যান, ট্যাক্সি বা বাস যা ই ঠিক করি না কেন, যেতে হবে আমাকে বাইরেই। আর বাইরে গিয়ে যে কোন জায়গা থেকে, কতোক্ষণে ওগুলো ঠিক করতে পারবো তা তো এখনো বুঝে উঠতেই পারিনি। তাই অন্তত আমার নিজের ঐ উলের থার্মালটা বের করা দরকার। গোটা এয়ারপোর্টের মতো এই লাউঞ্জটিও ফকিরা হলেও উষ্ণতায় কমতি নেই এখানে। তাই সবাইকে এখানেই বসিয়ে রেখে একাই বেরুবো আমি অচিরেই ফের ঐ উত্তপ্ত হাবিয়া আবহাওয়ার বিপরীত ঠাণ্ডা হাবিয়া আবহাওয়ায়।
‘গ্লাভস তো এখানে খুঁজে পাচ্ছি না। ঐ সুটকেসে রাখলাম, নাকি ব্যাগে রেখেছি তাও তো মনে করতে পারছি না’- লাজুর এই হতাশ স্বগতোক্তি এসময় কানে যেতেই, এগুলাম ট্রলির দিকে ফের। উদ্দেশ্য, ওর বাকি সুটকেসটা নামিয়ে, একই সাথে চান্সে আমারও বড় সুটকেসটা চুপিসারে খুলে ওটা থেকে আমার উলেন থার্মালটা বের করে নেয়া। এই ভেবে লাজুর ছোট, না বলা ভাল মাঝারী সুটকেস ট্রলি থেকে নামাতে নামাতে মনে হল, আচ্ছা ঐ থার্মাল না হয় চুপিসারে বের করে নিলাম লাজুর অজান্তে। চুপিসারে বলছি এ কারণে যে ও যখন দেখতে পাবে আমাকেও বড় সুটকেসটি খুলতে হচ্ছে, তখন একটু আগে আমি যে ভুল করে বিরক্তিটি প্রকাশ করেছিলাম তার শোধ নিয়ে নেবে কালবিলম্ব না করে। তা যেমন হতে দেওয়া যায় না, তেমনি চুপিসারে ঐ থার্মাল আন্ডারওয়ার বার করা গেলেও, এ জায়গায় তো ওটা চুপিসারে পরা যাবে না!
ওটা পরতে হলে যেতে হবে টয়লেটে। আসার পথে কোন টয়লেট দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। অবশ্য টয়লেট এখানে নেই তা তো নয়। নিশ্চয় আছে। আর চোখে না পড়ে থাকলেই কি, খুঁজে বের করে নেয়া যাবে ওটা। তবে ঐ টয়লেটে গিয়ে এটি পরার মতো যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা পাওয়া যাবে বলে তো মনে হচ্ছে না।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্গাপূজার সেকাল একাল
পরবর্তী নিবন্ধকরোনা আক্রান্ত শিক্ষাব্যবস্থা; বিপাকে শিক্ষার্থী না পরীক্ষার্থী?