দেশ হতে দেশান্তরে

রোলার কোস্টার রাইড

সেলিম সোলায়মান | রবিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

ভাগ্য ভাল যে জিনিষটা বৈজ্ঞানিকরা আবিষ্কার করেছিলেন। আবিষ্কারটি অবশ্য করেছিলেন তাঁরা নিছক তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ খেলার মুহূর্ত সৃষ্টির জন্যই; তাতেই ইংরেজিতে দুরন্ত গতিতে অপসৃয়মান, তীব্র উত্তেজনা, আনন্দ, হতাশা ও ভয়ের ককটেলে তৈরি হওয়া সময়কেবোঝাতে, রোলার কোস্টার রাইড রূপকটি ব্যবহার করা যাচ্ছে। দেশের ফেরার পর গত সপ্তাহব্যাপী প্রলম্বিত সময়টি আমার জন্য ঠিক ঐরকমই।

অনেকদিনের অভিজ্ঞতায় জানি এ গ্রহজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অফিসগুলোকে, আমাদের বৈশ্বিক কোম্পানিটি যে ক্যালেন্ডারের এক সুতায় বেঁধে রাখে, সেটি মোতবেক সকল কান্ট্রি হেড, মার্কেটিং হেড ও সিএফওদের জন্য বছরের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী ব্যস্ত সময় হল এটি। এ সময়টায় নিজ কর্মস্থলে এই ত্রিমূর্তির সার্বক্ষণিক উপস্থিতি এক অলিখিত অলঙ্ঘনীয় নিয়ম। কারণ এ সময়েই গ্লোবাল ও রিজিওনাল অফিস পরবর্তী বছরের বাজেটপ্লান রোল আউট করে। তদুপরি আমাদের কুমিল্লার কথ্য ভাষায় সেরের উপর সোয়া সের বলে যে কথা আছে, সে রকম এই বাজেট প্লানিংয়ের সেরের উপর, অতিরিক্ত সোয়াসের হিসেবে, যার যার নিজের ও তার তার টিমের মিডইয়ার পারফর্মেন্স রিভিউও শেষ করতে হয়, এই সময়টাতেই। এমতাবস্থায় নতুন কর্মস্থল রিয়াদ থেকে এ সময় তো মোটেও নড়ার কথা নয় আমার। কিন্তু তা হবার উপায় ছিল কই? অফিসের সিস্টেমে, কাগজেকলমে আমি সৌদি আরবের চিফ মার্কেটিং অফিসার। অন্যদিকে সৌদিতে পরিকল্পনামাফিক নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করার জন্য জরুরী যে ওয়ার্ক পারমিট, তা তো জোটেইনি কপালে এখনো আমার, উপরন্তু আরো একটি অতিরিক্ত সোয়াসেরের মতো এ সময়েই শেষ হয়েছে কী না আমার বিজনেস ভিসার মেয়াদ। অতএব দেশে না এসে এ গোলাম হোসেনের উপায়ই বা ছিল কী?

তারপরও নিজ কপালে হাত ঠেকিয়ে সেই কপালকেই সালাম ঠুকছি এজন্য যে, ভাগ্যিস গত মাসের, মানে জুনের মাঝামাঝি সময়ে আমার রিয়াদ টিমের নানানজনের কাছ থেকে, যখন তাদের বাৎসরিক ছুটি কাটানোর জন্য জুলাই টার্গেট করে আবেদন আসতে শুরু করেছিল, তাতে প্রথমে আঁতকে উঠে ভেবেছিলাম, আচ্ছা এরা কী জানে না যে জুলাই আগস্ট হল তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত মাস? পরে মনে হয়েছিল, আরে এখানকার অফিসতো এতদিন চলেছে সৌদি ডিসট্রিবিউটর, যিনি নাকি কোন এক মহা আকারের শেখ না প্রিন্স, তার খেয়ালখুশিতে। কিন্তু এখনতো চলবে না তা। ফলে দ্রুতই বসেছিলাম সবাইকে নিয়ে ব্যাপারটির দফা রফার উদ্দেশ্যে।

আর ওইসময় না বসলে তো টেরই পেতাম না যে, সেরের উপর সোয়াসের নিয়ে আসা জুলাইয়ে, পেতে যাচ্ছি আমি গোঁদের উপর বিষফোঁড়াও! ঐ মিটিং থেকেই জেনেছি জুলাই আগস্ট মাসে মরুসূযের্র মেজাজ চরমে উঠে বলে, এ সময়টাতে সৌদি আরবের স্কুলগুলোতে শুরু হয় প্রলম্বিত এক গ্রীষ্মছুটি। পেশাগত কারণে থাকেন যারা দারাপুত্রপরিবারসহ সৌদিতে, তাদের সকলের পরিবারই মুখিয়ে থাকে এ সময়টায় নিজ দেশে গিয়ে, মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেবার আশায়।

সে যাক, ঐ মীটিঙয়ের শুরুতে যদিও ভেবেছিলাম সহজেই করে ফেলতে পারবো ঐ টিমছুটি প্লানিং, আদতে হয়ে উঠেছিল সেটিই বেজায় জটিল। এমনিতে নানান কারনে, অকারনে মিশরিসমৃদ্ধ আমার টিমের সদস্যরা, মিশরি মিশরি ভাই ভাই বলে, দল তো নয় ঘোট পাকালেও, ছুটির ব্যাপারে দেখলাম, কেউ কাউকেই দিচ্ছিল না ছাড় এক রত্তিও। রা একই, সবার! তা হলো ব্যাপারটা তারা নিজেরা বুঝলেও, তাদের স্ত্রীরা তো মানবে না তা। সারাবছর সৌদিতে আবায়াসহ নানান কড়া বিধি নিষেধের ঘোরটোপে দমবন্ধ অবস্থায় থেকে, সকল মিশরি নারীই এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকে দেশে গিয়ে আবায়া বোরকা ছুঁড়ে ফেলে সরাসরি অক্সিজেন নেবার জন্য! আর স্ত্রীদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার কথা না জানার মতো বেকুব তো নই আমি। অতএব সকলেরই ঐ স্ত্রীযুক্তি উপেক্ষাই করি কী করে? অন্যদিকে টিমলিডার হিসেবে আমারও তো অলিখিত ও অলঙ্ঘনীয় দায় হচ্ছে, শুধুই তো তাদেরকে পেশাগত চ্যালেঞ্জ নেবার জন্যই উদ্বুদ্ধ করা নয়! তাদের ওয়ার্ক লাইফ ব্যাল্যান্স রক্ষার দায়ও তো আমারই। এছাড়া স্ত্রীদের ভয় না পাবার কড়া শাহী ফরমান জারী করেও যখন গল্পের তুমুল একনায়ক সম্রাট নিজেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন সেই ভয়ের জালে, সেইখানে আমি তো কোন সোলেমানি তরিকা জানা সোলায়মান না!

কপাল ভাল যে, অনেক আলোচনা ও বাকবিতণ্ডার পর, অবশেষে সেদিন প্রথম আহমেদ নাশাত বলেছিল অবিবাহিত হওয়ায় তার যেহেতু নেই কোন স্ত্রীবিষয়ক দায়, যাবে না ছুটিতে সে এসময়। নাশাতের কথার পিঠাপিঠি সেসময় তার ডাইরেক্ট বস আহমেদ রাদি ও আরেক প্রডাক্ট ম্যানেজার মোহাম্মেদ হেলালও ঠিক করেছিল জুলাইয়ে লম্বা ছুটি নেবার বদলে, দুই তিন দিনের ছুটি নিয়ে মিশরে পরিবার রেখে ফিরে আসবে তারা। পরবর্তীতে বাকীরা অফিসে ফিরলেই, নেবে তারা বাৎসরিক ছুটি। আবার কানাডিয়ান পাকিস্তানি ব্র্যান্ড ম্যানেজার আমির শামিমও জানিয়েছিল তখন যে, তার পরিবার যেহেতু থাকে কানাডায়, যাবে না সেও ছুটিতে এসময়। তাতে কিছুটা হাফ ছেড়ে, নজর দিয়েছিলাম অতপর তাদের দিকে, লম্বা ছুটির ব্যাপারে ছিল যারা অনড় অটল। এমনিতে বসেরা ছুটি দেওয়া না দেওয়ার হর্তাকর্তা বিধাতা হলেও, আমি তো হতে চাই লিডার। জিজ্ঞেস করেছিলাম তাই ওদের যে, এ সময়ের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করবে কিভাবে তারা?

উত্তর পেয়েছিলাম, মিশরে বসেই তারা কাজ করবে এবং সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য টেলিকনফারেন্স করবে আমার সাথে। অবশ্য আরকেটা ব্যাপার টিমের সকলেই বলেছিল যে, এই বছরের বাকী সময়টায় কোম্পানির সেলস মার্কেটিঙের লোকজনদের উত্তেজিত উদ্বেলিত করতে “ইস্তাম্বুল অর কুয়ালালামপুর” নামে যে ক্যাম্পেইনের আওয়াজ তুলেছি এবং সেটি দুবাই মিটিঙয়ে রোল আউট করার প্রস্তুতি হিসেবে, টিমের সবাইকে নিয়ে আবু দিরাব কান্ট্রি ক্লাবে যে অফসাইট মিটিং এর আয়োজন করেছি, সে নিয়ে তারা নিজেরা যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তাতে বাজেটের অনেক কাজই এগিয়ে গেছে। কথাটা অবশ্যই সর্বাংশেই সত্যি। তাতে এখন শুধু নিজে রিয়াদে থাকতে পারলে কোন কথাই ছিল না। কিন্তু, অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়, এই সূত্র মোতাবেক আমার কপালে অতো সুখ সইবে কেন? ফলে নতুন ভিসা নেবার জন্য দৈহিকভাবে যতোই থাকি না কেন এখন ঢাকায়, মগজের নিউরনে নিউরনে সর্বক্ষণই ঘুরছে সৌদিঅফিস! অথচ এখনো কোন কূল কিনারা করতে পারেনি গিউসি, আমার ভিসার।

এদিকে ঢাকায় আমার দৈহিক উপস্থিতিতে পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, শুভানুধ্যায়ী, আত্মীয়স্বজন সকলেই মনে করছে, আছি ছুটিতে। আসছে তাই চতুর্দিক থেকে নানান কিসিমের অনুরোধ, অনুযোগ, আব্দার। তবে এসবের মাঝে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় পড়েছি, টানা তিন মাসেরও বেশী সময় পর পিতাকে কাছে পাওয়া মহাআনন্দিত উত্তেজিত আমাদের শিশুপুত্রদ্বয়কে নিয়ে। কিছুদিন আগে তাদের স্কুলফাইনাল হয়ে যাওয়ায়, আছে তারা ঘরে লম্বা ছুটিতে। স্বভাবতই এখন ওদের তীব্র অব্যক্ত আকাংখা, আমার সার্বক্ষণিক অখণ্ডসঙ্গ পাওয়া! অথচ দিতে তো পেরেছি তা, শুধুমাত্র প্রথম দু দিন। যার মধ্যে প্রথমদিন ওদের যাবতীয় উত্তেজনা দুই ভাগ হয়ে একভাগ ছিল, হাতে পাওয়া নতুন খেলনা ঘিরে। কিন্তু একদিন পরেই খেলনা বিষয়ক ওদের তুমুল উত্তেজনা ফিকে হয়ে গেলে, পুরো মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছে যখন পিতাকে ঘিরে, তখন থেকেই মানে ঢাকাবাসের আমার তৃতীয় দিন থেকেই, রীতিমত সৌদি অফিসের কাজ করতে হয়েছে বাংলাদেশের পুরানো অফিসে বসে। ডিজিটাল টেকনলজির নিত্যনতুন ভেল্কিতে, আজকালতো অফিস করা যায় যে কোন জায়গা থেকেই! দরকার শুধু সার্বক্ষণিক সঙ্গী ল্যাপটপকে কোম্পানির ইন্ট্রানেটে কানেক্ট করা। সাইবার নিরাপত্তা নিশিচত করার জন্য সেই নেটওয়ার্কে ঢুকতে হয় কোম্পানির নিজস্ব নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েই। ঢাকায় আমার সেই ভরসাস্থল হল নিজেরই ভূতপূর্ব অফিস।

অবশ্য এখানে পূর্বতন কর্মস্থলে গেলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়। প্রথমত, দেখা সাক্ষাৎ হয় নিজের পূর্বতন টিমসহ অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে, আমার অনুপস্থিতিতে যারা আমার পরিবারের নানান প্রয়োজনে বলিবামাত্র বা ডাকামাত্র হাজির হয়। এ ব্যাপারে একসময়ের বস মনসুর ভাই, আমার সেকেন্ড ইন কমান্ড ডাঃ রিয়াদ, আমি সৌদিতে যাওয়ায় হয়েছে যে আমারই স্থলাভিষিক্ত, এ দুজনের কাছে হয়েছে জমা অনেক ঋন। এছাড়া ঢাকাস্থ সেলস টিমের জামিল ও অন্যান্য সবাইতো আমার অনুপস্থিতিতে সময়ে সময়ে রেখেছে পরিবারের ভালমন্দের খোঁজ। সেদিক থেকে কাজের উসিলায় অফিসে গেলেও, সে সুযোগে প্রকাশ করতে পেরেছি তাদের প্রতি অতি প্রয়োজনীয় অব্যক্ত তুমুল কৃতজ্ঞতাও।

পূর্বতন কর্মস্থলে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাজটি সুচারুরূপে করা গেলেও, ল্যপটপে অতি প্রয়োজনীয় অফিসিয়াল কাজ করতে গিয়ে অহরহই পড়েছি সাইবার যন্ত্রণায়। যদিও অফিসে হাজির হওয়া মাত্রই, সুপ্রিয় রিয়াদ তার রুমের ইন্ট্রানেট পোর্টে আমি যাতে সহজেই কানেক্ট করতে পারি সে ব্যবস্থা করে রেখেছে, তারপরও হচ্ছে সমস্যা। কারণ আমার সৌদি ল্যাপটপের নাড়ি যে পোতা কোম্পানির ইউরোপিয়ান সার্ভারে, অন্যদিকে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি হল এশিয়া প্যাসিফিক সার্ভারে। ফলাফল, যখনই আমি কোন বড় ফাইল ডাউনলোড করতে যাই বা পাঠাতে চাই, ইন্ট্রানেটের এশিয়ান গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড পেরিয়ে, প্যান ইউরোপিয়ান হাইওয়েতে ঢুকতে লাগে প্রচুর সময়! ঘটে তাতে ক্ষণে ক্ষণে ধৈর্যচ্যুতি। আসলে এইসময়ে, ডিজিটাল ইঁদুরে ক্লিক করিবামাত্র নানান কর্ম সম্পাদন করিয়া ফেলিতে অভ্যস্থ হইয়া পড়ায়, আজকাল সম্ভবত গোটা মানবজাতিরই কমে গেছে ধৈর্য। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে তাই প্রায়শই ল্যাপটপ ছেড়ে, আগামী বছরের বাজেট প্রস্তুতির রোড ম্যাপ তৈরির জন্য বস ফিল, সি এফ ও আমিন ইব্রাহিম, ও আমার টিমের আছে যারা এ মুহূর্তে রিয়াদে মওজুদ, তাদের সাথে লম্বা টেলিকনফারেন্স করেই থাকতে হয়েছে সন্তুষ্ট বেশীর ভাগ দিন, যদিও কমেনি টেনশন তাতে।

এরকম একটা ভজঘট অবস্থাতেই আবার দিনের নানান সময়ে ফাঁক ফোঁকর বের করে ছুটেছি, তিনমাসে জমে উঠা, পারিবারিক নানান কাজের বিহিত করতে। কারণ, বয়সেরভারে অসুস্থ ন্যুব্জ ও ক্রমশ শিশু হয়ে উঠা পিতাসহ আমাদের দুই শিশুপুত্রকে সামলে, আমার স্ত্রী পক্ষে বাইরের অনেক কাজই তো ইচ্ছা থাকলেও করে উঠা সম্ভব হয়নি।

এ তো গেল আমার না ঘরকা না ঘাটকা দিনগুলোতে অফিসের ও ঘরের নানান কাজের পেছনে ছোটার কথা। এরপর আবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত ৯/১০/১১টা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এ ক’দিনের সেকেন্ড শিফট, আমার। ভাল খবর হল তাতে ব্যস্ততার গতিবারলেও, এ সময়টা ছিল স্বস্তির। গত এক সপ্তাহে নানান পরমাত্মীয়দের সাথে এ সময়েই অতীব প্রয়োজনীয় আড্ডা মারা গেছে। না এই পরমাত্মীয়দের সাথে রক্তের কোনই যোগাযোগ নেই আমার। আসলে এ জীবনে পেরিয়েছি এ পর্যন্ত যতোটা পথ, তাতে প্রায়শই মনে হয়েছে বাংলা ভাষায় যাদের আত্মীয় নামে ডাকা হয়, তাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক থাকলেও, আত্মার সম্পর্ক বলতে গেলে শূন্যই। ফলে ঐ সম্পর্কগুলোকে আত্মীয় না বলে রক্তীয় নামেই ডাকতাম নিজমনে, বহুকাল থেকেই।

তদপুরি গত এক বৎসরেরও বেশী সময় ধরে পরিবার পরিজন ছেড়ে, প্রথমে সিঙ্গাপুর পরে সৌদিতে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি হাড়ে হাড়ে, পরিবারের নানান প্রয়োজনে রক্তিয়দের টিকিটিরও দেখা মেলে না যখন, ঠিক তখন রক্তের সম্পর্কহীন ঐ সব্জনেরাই পড়েন ঝাঁপিয়ে, কী রকম আস্তিন গুঁটিয়ে! এছাড়া এ অধমের যে কোন সামান্য সাফল্যে রক্তিয়রা তো অবশ্যই এমনকি বন্ধুরাও হয় যখন ঈর্ষান্বিত, সেসময় ইনারা হন নিখাদ আনন্দে তুমুল উদ্বেলিত! হ্যাঁ নিজ পেশার স্বার্থেই এক দেড় দশক আগে ইনাদের সাথে নিজেই স্থাপন করেছিলাম যোগাযোগ। এরপর সময়ের পরিক্রমায় তাঁরা তাঁদের অপার মহানুভবতায় হয়ে উঠেছেন অধমের পরমাত্মিয়। হলেন তাঁরা ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন মিঠু ভাই, ওনার স্ত্রী ডাঃ সবিনা ভাবি ও ডাঃ হাসানাত ভাই।

উপরন্তু সৌভাগ্য আরো আমার এই যে, এই তিন জনের সাথে আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন আরো, দেশের মেডিসিন বিষয়ের দিকপাল অধ্যাপক এম এন আলম, গ্যস্ট্রোএন্ট্রোলজির কীর্তিমান অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান, দেশসেরা প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক আবুল কালাম, ডায়াবেটিসের গুরু অধ্যাপক জাফর লতিফ, এনেস্থেসিওলজির ঝানু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আব্দুর রহমান, বিখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক চৌধুরী আলী কায়সার ও অর্থোপেডিকসের বাঘা প্রফেসর আব্দুস সামাদ। স্ত্রী পুত্র পরিবারের বাইরে আমার গত সাতদিনের রোলার কোস্টার রাইডের অন্যতম আনন্দময় ক্ষণ হয়ে উঠেছিল চা, সিঙ্গারা, বিস্কিট, মুড়িমাখা খেতে খেতে, ক্ষেত্র ও পাত্র বিশেষে ওনাদের সাথে দেখা করার, কথা বলার ও চুটিয়ে আড্ডা মারার ঐ হিরণ্ময় মুহূর্তসমূহই!

লেখক : প্রাবন্ধিক, ভ্রমণসাহিত্যিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী