দেশ হতে দেশান্তরে

জর্ডানকন্যা ও অদেখা পেট্রা-১

সেলিম সোলায়মান | রবিবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। কথাটা তো এইচ আর হেড গিউসি সরাসরি বলতে পারত? এখানে আসার পর থেকে তার সাথেইতো সবচেয়ে বেশী উঠাবসা ছিল আমার এবং আছে তা এখনো বলেই তো মনে করি। তবে হ্যাঁ, মাঝে পাকিস্তানী কানাডিয়ান সি এফ ও আমিন ইব্রাহিম ও একদম হালে সৌদি সেলস হেড মোহাম্মেদ খলিলের সাথেও যে বেশ সখ্যতা হয়েছে। তবে কি এটাই হচ্ছে না মিশরি গিউসির?

আমিনের সাথে গিউসির সম্পর্ক এখনো হাই হ্যালো পর্যায়ের, তবে খলিলের সাথে ভাব যে তার এক্কেবারে দহরম মহরম, দেখে আসছি তা শুরু থেকেই। সেইদিন খলিলের সাথে প্রথম অফিসিয়াল এবং ফর্মাল মিটিংয়ের পর থেকে গত কয় দিনে বেশ কয়েকবারই বসেছি দুজনে; তাতে দাপ্তরিক কাজ হয়েছে যেমন তেমনি হয়েছে আড্ডা জম্পেশ। ঐসব মিটিং কাম আড্ডার প্রয়োজন অবশ্যই আমারই ছিল বেশী। এ পর্যন্ত অফিসের নানান ডকুমেন্টস, মানে স্ট্রাটেজিক প্লান, বিজনেস প্লান, অপারেশনাল প্লান এসব পড়ে, যতোটা ধারণা নিতে পেরেছি সৌদি মার্কেটের, সরাসরি মাঠে নেমে সে সব বিষয়ে চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করা দরকার তো। সরাসরি মাঠে নেমে একদিন কাজের মতো কাজ করলে, কোন দেশ, এলাকা বা সমাজের মানুষের জীবনাচরণ সম্পর্কে হাতে কলমে যে অভিজ্ঞতা হয়, তা তো মাসের পর মাস বইপত্র দলিল দস্তাবেজ পড়েও হয় না বলেই মনে হয় আমার।

ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে এই গ্রহটির নানান অংশের মানব সমাজ নানা দেশ সমাজ ও জাতিতে বিভক্ত হয়ে, সেভাবেই পরিচিত হয়ে উঠলেও, বিপণনবিদের কাছে ওইগুলির মূল পরিচয় হল মার্কেট বা বাজার। যতোই আজ ডিজিটাল টেকনলজির শনৈ শনৈ অগ্রগতির কারণে এই গ্রহ একটি একক ও অভিন্ন বৈশ্বিক বাজারে পরিণত হয়ে উঠছে বলে মনে করা হোক না কেন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐ ভিন্নতাগুলোর কারণে বাজারগুলো এখনো একদম একীভূত হয়ে যায়নি। বিপণনবিদের জন্য তাই জরুরি হলো তার বাজারটির সেই ভিন্নাত্মাটির খোঁজ নেয়া, প্রথমে। সেই খোঁজ পাওয়া যায় ঐ বাজারটির মানুষদের সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছে যা বহু শত বা হাজার বছর ধরে। বোদ্ধারা বলে থাকেন বলেও এই অধমওন না জেনে বুঝেই একমত তাদের সাথে যে, সংস্কৃতি নিয়ত পরিবর্তনশীল। তবে নিয়ত এই পরিবর্তনশীলতার মাঝেও আমার কেন জানি মনে হয় প্রতিটি সংস্কৃতিই শেষ পর্যন্ত তার আত্মাটিকে বাঁচিয়ে রাখে। অতএব নিজের পেশাগত প্রয়োজনেই খলিলের সাথে আমার ভাল বোঝাপড়া থাকা জরুরি। তার টিমই তো কাজ করছে এই মরুদেশের নানান কোনে কোনে সরাসরি মাঠে। এছাড়া খলিলের সাথে প্রথম অফিসিয়াল মিটিংয়ে বসেই বুঝেছিলাম, মানুষ হিসেবে সে অত্যন্ত দিলখোলা যেমন, তেমনি সে আড্ডার পোকাও। অতএব দুজনের জমে যেতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি।

এটাই কি তবে গিউসির পছন্দ হচ্ছে না নাকি? সেজন্যই কি এ রকমটা করলো নাকি? যাবো নাকি তাকে জিজ্ঞেস করতে যে, সরাসরি ব্যাপারটা সে আমাকে বলেনি কেন? নাহ, যাবো না তার কাছে। কোনই দরকার নাই।

সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবছিলাম এসব। একটু আগে সাইফ, মানে এ অফিসের যে সুদানি ড্রাইভার আমাকে প্রথমদিকে অফিসের পুলকার আর হালে আমারই নামে বরাদ্দকৃত গাড়িটি চালিয়ে অফিসে আনা নেওয়া করতো, মুখ ভার করে সে রুমে ঢুকে টেবিলে গাড়ীর চাবিটি রেখে কাচুমাচু করতে থাকলে, বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেছিলাম ঘটনা কী? ইতস্তস্ত করতে করতে নিম্নকণ্ঠে জানিয়েছিলসাইফ, ডক্টর গিউসি তাকে আমার গাড়ির চাবি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে, আজ এইক্ষণ থেকেই তার সাবেক পুলকার চালানোর কাজে ফিরে যেতে বলেছে!

হুম, এখনো এখানকার ইকামা হাতে না আসলেও, এখানে কাজ করার জন্য যে অফিসিয়াল কন্ট্রাক্ট সাইন করার কথা, হয়ে গেছে তা বেশ কিছুদিন হলো। বাকি আছে শুধু এখন আমার কমপেঞ্জেশন ও বেনফিট মানে বেতন ভাতাদির দফা রফা হওয়া। সেটি অবশ্য আসবে হেড কোয়ার্টার সুইজারল্যান্ডের বাসেল থেকে, এসেছি এখানে যেহেতু ইন্টারন্যাশানাল এসাইনি হিসেবে। তবে ঐ লোকাল কন্ট্রাক্ট সাইন করার সময় বলেছিলাম, আমি ড্রাইভার এলাউন্স নেবো কিন্তু ড্রাইভার নেবো না। সে জন্যেই কি এটা করলো নাকি গিউসি?

নাহ, তাও তো মিলছে না। লোকাল সেই কন্ট্রাক্ট সাইন করেছি, তাও তো হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক। সেটিই যদি কারণ হয়ে থাকে, তাহলে গিউসির তা তো করার কথা ছিল, সেই সময়েই। আজ করলো কেন ? এই ঘটনায় বেশ হতচকিত হলেও, অপমানিতও বোধ করছি ভালই! চলবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, ভ্রমণসাহিত্যিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅমৃতসূর্য যৌবনবসন্ত
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিন : ধরিত্রীর বুকে এক দগদগে ক্ষত