মধ্যদুপুরে সান্ধ্য আবহ : ১
আমার কথায় খুশি মনে হেলেন ব্যাগের সেকশন থেকে তার পছন্দের ব্যাগ আনার জন্য চলে যেতেই, লাজুকে বললাম চল যাই, তোমার ঐ জুতোটা নিয়ে নেই
‘না থাক এখন জুতো নেব না এখান থেকে। আরো দুয়েকটা মার্কেট দেখে নিই।’
লাজুর না বোধক উত্তর শুনে পুত্রদের জিজ্ঞেস করলাম তারা ঠিক করেছে কি না কী নেবে ওরা আদিবের জন্য?
‘রিমোট কন্ট্রোলড হেলিকপ্টার নিব। তবে এখান থেকে না। ঐ যে ম্যাকডোনাল্ডসের কাছে একটা বড় খেলনার দোকান আছে, ওখান থেকে নেব।’ জানালো দীপ্র
এরইমধ্যে ততোক্ষণে হেলেন তার পছন্দের ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসায়, আপাতত এখানকার পাঠ দ্রুত চুকানোর মানসে বাড়ালাম পা এইতলার ক্যাশ কাউন্টারের দিকে।
নাহ দাম মেটাতে গিয়ে এখানে বেহুদা সময় নষ্ট করা যাবে না। যদিও এতক্ষণ ইচ্ছে করে গদাই লস্করি চালে যে এখানে সময় নষ্ট করেছি, তা তো নয়। তারপরও হঠাৎ কেন জানি মনে হল যে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে এখানে, নাহ ফিরতে হবে দ্রুত আমাদের হোটেলের কাছে। ওখানে বেশ কটা শপিংমল আছে। বাকি কেনাকাটা সব ওইদিকেই করা যাবে। এমত ভাবনায় ক্যাশ কাউন্টারে এসে, ক্রেডিটকার্ড দিয়ে দাম দিতে গিয়ে ফের হাঙ্গামায় পড়তে চাইল না মন। অতএব নগদানগদি রেন মেন বি তে দাম মিটিয়ে, এগুলাম বাইরের বেরুবার গেইটের দিকে।
যদিও জানা ছিল সকলেরই ব্যাপারটা তারপরও মনে হচ্ছে প্রস্তুতি কারোই ছিল না বুঝি বাইরের বেইজিং হিমের মুখোমুখি হওয়ার। ফলে এতোক্ষণের শপিংমলের ওম ওম গরমের আরাম থেকে বের হয়ে বাইরের হিম ঝাপটার মুখোমুখি হতেই সকলের মুখ থেকেই নিঃসৃত হল নানান রকমের ধ্বনি। ধারনা করি, হিমের কষ্টের প্রকোপ ভাষাতেই প্রকাশ করলে তা নানান রকম শোনালেও,এই ধ্বনি সমূহ সম্ভবত সকল ভাষাতেই একই ব্যঞ্জনা দেয়।
সে যাক দুশ্চিন্তার বিষয় হল, মলের এই পিক আপ ড্রপ সেকশনে আমাদের পাঁচজন একসাথে যাওয়ার মতো বড় ভ্যান তো দূরের কথা সাধারণ ট্যাক্সিও দেখতে পেলাম না একটাও। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে ট্যাঙি নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে, কিন্তু ভ্যান পাওয়া যাবে কি ? যদি না যায়, তবে এই হিমে এখানে অপেক্ষা করার মানে তো নেই। এই ভেবে কিছুটা ভয়ে ভয়ে দিলাম প্রস্তাবটা
শোন, আমার তো মনে হয় না, এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ঠাণ্ডায় জমে যাবার কোনও মানে আছে। মনে তো হয় না, যে পাবো এখানে ঐরকম বড় কোনও ভ্যান। তার চেয়ে বরং চল হাঁটি সামনের দিকে।
‘হ্যাঁ, ঠিক আছে চলো চলো সবাই’
মুখের কথা পুরো শেষ হওয়ার আগেই শীতকাতুরে হেলেন সবাইকে তাড়া দিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিতেই পুত্রদ্বয়ও দ্রুত করলো অনুগমন
‘আমরা কি তাহলে হেঁটেই ফিরে যাবো নাকি ?’
তা তো বুঝতে পারছি না। ভ্যান পেলেই নিয়ে নেব। না হয় ঐ যে মেট্রোস্টেশনটা দেখেছিলাম না, ওখান থেকে মেট্রোতে চড়ে ফিরবো। ভালো কথা, তুমি না ঐ পঙ্গু লোকটা যে খালি গায়ে ভিক্ষা করছিল তাকে টাকা দিতে চেয়েছিলে, আপাতত ঐখান পর্যন্ত তো যাই আগে। ওইখানে যেহেতু অফিস টফিস আছে বলেই মনে হয়েছে, ওখানে গেলে পাওয়া গেলে যেতেও পারে ভ্যান।
‘আচ্ছা, বল তো ঐ জুতাটা কি নিয়ে নেব নাকি ? যদি না পাই ওটা অন্য কোথাও?”
বোঝা গেল একটু আগে হেঁটে যাওয়া বিষয়ক যে প্রশ্ন করেছিল লাজু, ওটা আসলে কথার কথাই ছিল। অতএব যা বলেছি উত্তরে তা সম্ভবত ওর কানে গেলেও মরমে পশেনি। আছে সে আসলে জুতা ভাবনায়। দ্রুত তাই বললাম,
দেখো, ঠিক করো এখুনি, নেবে নাকি ঐটা। এখনো কিন্তু ইচ্ছে করলে ফিরে গিয়ে নিতে পার জুতোটা। কাছেই তো আছি এখনো এই মলের।
“না থাক নেব না ওটা। চল যাই সামনেই। ওটা না পেলে অন্য যেটা পছন্দ হবে সেটাই না হয় নেব। অবশ্য জুতা নিতেই হবে এমন না। আমি কিন্তু সিল্ক কিনব। ওইখানকার মার্কেটে সিল্ক পাওয়া যাবে তো ? এই মলে তো সিল্ক দেখলাম না।“
খুঁজে দেখবো। পাওয়া তো যাওয়ার কথা। ওখানে তো নানান ধরনের বেশ অনেকগুলো শপিংমল দেখলাম। এটাতে পাওয়া না গেলেও ওখানকার কোন না কোনটাতে নিশ্চয় পাওয়া যাবে সিল্ক। চল চল এখন একটু পা চালিয়ে হাঁটি আমরা। ওরা কিন্তু দেখো বেশ এগিয়ে গেছে।
স্বাভাবিকের চেয়ে জোরেই হাঁটছি চুপচাপ পাশাপাশি দুজনে এখানকার রানওয়ের মতো চওড়া ফুটপাত ধরে। হিমবাতাসের তোড় এখন মনে হচ্ছে কমেছে বুঝি কিছুটা। নাকি এই ফুটপাতের আরেক মাথায় পেছনে ফেলে এসেছি যে বিশাল ওরিয়েন্টাল মল, ঐটি আদিগন্ত খোলা তিয়েন আন মেন স্কয়ারের কাছাকাছি হওয়াতে ওখানটায় হিম হাওয়ার তোড় বেশী ছিল। এদিকটার ফুটপাতের এখন আমাদের বাঁয়ে যেরকম একটানা দেখছি নানা আকার ও আকৃতির দালান, তার তুলনায় ওরিয়েন্টাল মলের ঐ অংশটাকে অনেকটা ফাঁকাই বলতে হয়। যার কারনেই হয়তো এদিকটায় এখন বাতাসের তোড় তেমন বেশি মনে হচ্ছে না। তা হউক কারণ যা ইচ্ছা তা। বাতাসের তোড় কমে যাওয়াতে হিম তার তীব্র কামড় যে যুৎ মতো বসাতে পারছে না শরীরের খোলা অংশে সেটাই হলো আশার কথা। (চলবে)।
লেখক : প্রাবন্ধিক, ভ্রমণ সাহিত্যিক।