বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ যাতে চরমপন্থী ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে না পারে, সেই প্রত্যাশা করে বিএনপি। এজন্য সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের আয়োজনে ‘গণতন্ত্র উত্তরণে কবি সাহিত্যকদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এই দেশে যেন কোনো দিন কোন চরমপন্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে না পারে, সেটিও আমাদের প্রত্যাশা, সেটি আমাদের লক্ষ্য। খবর বাসসের।
দেশে জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করতে ‘নির্বাচন একান্ত প্রয়োজন’ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই দেশের মালিকানার একমাত্র দাবিদার এই দেশের সকল নাগরিক, এই সত্যটাকে যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, বাক স্বাধীনতার পক্ষে, একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তারেক রহমান কবি–সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যদি সেটি (জবাবদিহিতার পরিবেশ) করতে সক্ষম হই এখানে আপনারা কবি–সাহিত্যিকরা লেখার স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন, আপনারা মত–পার্থক্য তুলে ধরার কথা বলেছেন, সমালোচনার কথা বলেছেন, আমরা সেই অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি যদি আমরা একটি একাউন্টেবল রাষ্ট্র ব্যবস্থা করে তুলতে সক্ষম হই। এবং সেটি একমাত্র করা সম্ভব মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে। তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সকল শহীদের রক্তের দায় পরিশোধের সময় এসেছে আজ। এদেশের একজন কৃতজ্ঞ সন্তান হিসেবে আজ এই সুন্দর অনুষ্ঠানে আপনাদের–আমাদের সকলের কণ্ঠে ঐক্যের প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হোক। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে একটি প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বিএনপি মিডিয়া সেলের আয়োজনে কবিতা পরিষদের কবি ও সাহিত্যিকদের সাথে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়। কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কিছু দাবিনামাও তুলে ধরা হয়। কবি–সাহিত্যিকরাও তাদের লেখার স্বাধীনতার কথা বলেন। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কবি–সাহিত্যিকদের বক্তব্য আগ্রহের সাথে শুনেন এবং সবশেষে নিজে বক্তৃতা করেন।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তারেক বলেন, আজকের এই শ্রাবণ দিনে যে বিশ্বাস আর প্রত্যয়ের কথা বহু বক্তা এখানে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছেন আমাদের অবস্থান। আমি মনে করি এটি আমাদের এক এবং অভিন্ন আদর্শিক অবস্থান। তিনি বলেন, এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের দৃঢ় অবস্থানের সাথে আমাদের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের মানুষ কিছুদিন আগে বিতাড়িত করেছে সেই স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণ প্রতিহত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আপনাদেরই মতন। আমাদের সাথে হয়ত আপনাদের সকলের আদর্শিক অবস্থান এক নাও হতে পারে। পলিটিক্যাল আইডোলিজ এক নাও হতে পাওে, কিন্তু এটি কোন সমস্যার বিষয় নয়, এটিকে কেউ দয়া করে সমস্যা হিসেবে দেখবেন না। বিষয় হচ্ছে যে, এই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা প্রকাশের জায়গায় কিন্তু আমরা সকলে এক।
উইলিয়াম শেঙপিয়ার, ওয়ার্ডসওয়ার্থ–রবীন্দ্র–নজরুল প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কবি সাহিত্যিকরা যুগে যুগে নিজেদের মাত্রাকে এতটা উঁচুতে নিয়ে গেছেন যার ফলে অনেক সময় দেখেছি, আমরা তাদের নিজেদের পরিচয় দেশ এবং জাতির পরিচয় সমার্থক হয়ে উঠেছে। যেমন উইলিয়াম শেঙপিয়ার বা উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ব্যক্তির থেকে ইংরেজি সাহিত্যের নাম হয়ে উঠেছেন। একইভাবে আমরা বলতে পারি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে উঠেন এই মহাদেশের পরিচয়ের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঠিক এমনিভাবে কবিতা ও দেশাত্মবোধ সঙ্গীতকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে একাকার করে স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে দেশ গঠন ও দেশাত্মবোধের প্রেরণা নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ এই গানকে তার দল বিএনপির দলীয় সঙ্গীতে পরিণত করেছে অনুপ্রেরণার গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকে। শহীদ জিয়ার সেই আদর্শ আজও সমুন্নত জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রতিটি নেতার কর্মীর মাঝে। ‘এজন্যই কবি–সাহিত্যিকরা অসাধারণ, আমরা সাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, আপনারা কবি–সাহিত্যিকবৃন্দ আমাদের কথাগুলো খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন এবং আপনাদের যে মনোজগত আছে সেই মনোজগতের ভিতরে আপনারা স্থান নিতে পারেন আপনাদের গুণ দ্বারা। সেখানেই কিন্তু আমরা মনে করে নিতে পারি যে, আপনারা অসাধারণ এবং আমরা সাধারণ।