দেশ এগিয়ে নিতে হলে সততা একান্ত আবশ্যক

সুপ্রতিম বড়ুয়া | সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

যুগে যুগে তরুণরাই বিশ্বজয়ে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। বিশ্বকে জয় করে ছুটে চলেছে মহাবিশ্ব জয়ের নেশায়। আজকের তরুণরাই আগামী প্রজন্মের নির্মাতা। একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদও বটে। পৃথিবীর যেকোনো উন্নত দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায় সেদেশে তরুণদের ভূমিকা কতটা গভীর। এই তরুণদের নির্মাণ করতে সেসব জাতি তাদের দিয়েছে বিশ্বমানের শিক্ষা, শিক্ষক আর প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো। একসময় সেই তরুণেরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো পৃথিবীর উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছে, হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতেও হবে। বর্তমানে একটা ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে। সামনে নতুন দিন। নতুন সময়। আমরাও চাই একটি নতুন বাংলাদেশ। নতুন হলে কিছু স্বপ্ন থাকে। নতুন কিছু চিন্তা থাকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরেও নতুন এক দেশ আশা করেছিল দেশের মানুষের। সত্যিই কি তা পেয়েছিল? নানা পটভূমিতে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। দেশটি আপামর জনতার হয়নি। দেশটি হয়েছে সাহেবদের। এখানে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যেন সুটেড বুটেড সাহেবদের গোলাম! টাকার নিক্তিতে পরিমাপ হয় সমাজের তলা। সেই তলার নিচে চাপা পড়ে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। বাজারে মজুতদারদের দৌরাত্নে নিত্য দাম বাড়ে। সেই সুযোগে পকেটে মুনাফা তোলে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই চিত্র আর চাই না। সেই সাহস যেন কেউ কোনোদিন না পায়। এ দেশ হবে সত্যের ও সুন্দরের। সেই নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে? সেই বাংলাদেশ কার হবে? সেই বাংলাদেশ কি তখনও মুটেমজুরের সাথে সাহেবদের পার্থক্য করবে? এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না।

আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ যে দেশ হবে আপামন জনতার। যে দেশে থাকবে না কোনো আমলাতন্ত্র। যে তন্ত্রের জোরে মানুষকে মানুষই মনে করেন না কেউ কেউ। যে দেশে সাধারণ মানুষ হবে সত্যিকারের নায়ক। রাষ্ট্রের চাকরিতে বা সেবায় বা দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকবেন তারা হবেন সেবক কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী না। তারা হবেন সেবক মাত্র। কোনো সরকারি অফিসে কোনো সাধারণ মানুষ গিয়ে যেন হয়রানির শিকার না হয়। আজ যেমন সাহেবদের জন্য মুটে মুজররা রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ায় সেই বাংলাদেশে এইসব মুটে মুজরদের জন্য জনগণের সেবকরা রাস্তা ছেড়ে দিবেন। নম্র ভাষায় সকলের সাথে কথা বলবেন। কেউ যেন মনে না করে তাকে ঠকানো হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই কারও ছত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার সুযোগ না পায়। অবৈধ মজুদদারীরা যেন বেশি মুনাফার আশায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করতে পারে। এদেশে যারা আসবে তারা যেন সোনার মানুষ হয়। এ দেশটা হবে সোনার মানুষের। সত্যিকারের ভেদাভেদহীন বাংলাদেশ। এ দেশ হবে সব শ্রেণি পেশার, সব ধর্মের, সব বর্ণের। কোনো কর্মকর্তাদের যেন স্যার না ডাকার কারণে সাধারণ কোনো মানুষকে হয়রানির শিকার হতে না হয়। এদেশে আর কোনো স্যারদের চাই না। আমরা চাই সেবকদের। আমরা চাই মানুষ। নতুন প্রজন্মের এই শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস করে যে পরিবর্তন সূচিত হতে যাচ্ছে সেখানে সকলের চাই একসাথে চলা। আমরা সে পথ চলতেই চাই। তাই পরিবর্তনটা হওয়া দরকার দৃশ্যমান। এসবের জন্য চাই দেশপ্রেম। আমরা সকলেই দেশকে একটু দেওয়া শিখি। স্বাধীনতার এতগুলো বছর তো কেবল নিয়েই গেলাম। দিতে আর কি পেরেছি। দেশ নিয়ে একটা বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। সেটা হলো দেশ তোমাকে কী দিয়েছে সেটা বড় কথা নয়, তুমি দেশকে কী দিতে পেরেছ সেটাই বড় কথা। আমরা বেশিরভাগই নিজের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। এই যে বেতন বেড়েছে তাতে কি রাতারাতি ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অবৈধ উপার্জনের গলা টিপে হত্যা করতে হবে। আসলে অর্থ উপার্জন বা অভাবের সাথে লোভ বা দুর্নীতির সম্পর্ক আছে তবে জোড়ালো নয় বলে মনে করি। কারণ যদি কেউ মনে করে তাকে তার নির্দিষ্ট আয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, বাড়তি উপার্জনের প্রয়োজন নেই তাহলে সে তা পারে। অনেকে আবার পারিপার্শ্বিকতার দোহাই দিয়ে থাকেন। পত্রিকায় প্রায়ই ছোট ছোট পদে স্বল্প বেতনে কাজ করা কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল জীবনযাপনের চিত্র নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। সেগুলো দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। ঘুষ, দুর্নীতি আর অবৈধ উপায়ে নিজেকে সম্পদশালী করার চিন্তা দেশের জন্য ধংসাত্বক। দেশ এগিয়ে নিতে হলে সততা একান্ত আবশ্যক। বাহুবল খাটিয়ে নিজের কাছে আনলেই তো লেঠা চুকে গেল। তা তখন আর নেয় কে? দেশপ্রেম অন্তরের বিষয়। ভেতরে দেশপ্রেম না থাকলে প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব। দেশ না এগিয়ে গেলে জনগণ আগ্রসর হয় কীভাবে। জনগণের জীবন মানের সার্বিক উন্নয়ন না ঘটলে কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব না। দেশের জনসংখ্যা সাত কোটির ওপরে। এ জনসংখ্যা বাড়ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কর্মসংস্থান প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষার প্রসার। গতানুগতি শিক্ষা বাস্তব সমস্যা মেটাতে হিমসিম খায়। তাই কর্মমুখী শিক্ষা প্রয়োজন। আমরা নিজেদের কোথায় দেখতে চাই সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। জাপান উন্নত দেশ আপনা আপনিই হয়নি। সেদেশের মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে দেশটাকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ক্রমশই সেই উন্নয়ন আরও মজবুত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এর পেছনে রয়েছে দেশপ্রেম। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলেই দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। আমরাও আমাদের দেশকে ভালোবাসি। মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে সে উদ্দেশ্য সত্যিকার অর্থে কতটা পূরণ করতে পেরেছি। সেই চেতনার খুব কমই আজ অবশিষ্ট আছে। দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে আপনি বাঁচলে বাপের নাম সারাক্ষণ এই ধারণা নিয়ে পথ চললে নিজের উদ্দেশ্য সফল হবে বটে দেশের লাভ তাতে কমই হবে। আর দেশ সামনে না এগিয়ে গেলে আমরা সুখে থাকতে পারবো না। আমাদের দেশটাকে সোনার বাংলা করার জন্য দরকার নিখাদ দেশপ্রেম।

পরিবর্তন যদি হবেই তা সে ঝেড়ে নিয়ে নতুনভাবেই হোক। একটি দেশ আর দেশের মানুষ যদি সত্যি তাদের দেশটাকে ভালোবাসে তাহলে সব দল আর রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়েই দেশের সেবা করবেন। সাধারণ মানুষ যে কোনো দল বোঝে না তবে দেশ বোঝে তা তো প্রমাণিত। এই যে রাজনীতিবিদরা দেশকে একটি সুন্দর সিস্টেম উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, আকুণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থেকেছেন তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদরা এখনই সচেতন হোন। নতুন দিন আসতে চলেছে। নতুন দিনে যদি নেতৃত্ব দিতে চান তাহলে নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে। না হলে, ইতিহাস সাক্ষী মানুষ এখন অনেক সচেতন। জনগণ চাইলেই যে পরিবর্তন সম্ভব সেটি তো প্রমাণিত। সকল সেবা হবে জণগণের সহজপ্রাপ্য বিষয়। কেউ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবে না। হলে সেই সময়েই হবে প্রতিবাদ। এই বাংলাদেশ যেন হয় সত্যিকারের সম অধিকারের বাংলাদেশ। কোনো দলের নয়, মতের বা কোনো গোষ্ঠীর নয়। আবার আমলাদেরও নয়। এই বাংলাদেশ হবে সব মানুষের।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, রামু সরকারি কলেজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষক তো তিনিই- যার সবকিছুই শিক্ষণীয়
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংক খাত এবং বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি