শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সদ্ব্যবহার করেছে একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল। তারা সারা দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালিয়েছে, নাশকতা চালিয়ে ধ্বংস করেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করেছে বহু রাষ্ট্রীয় সম্পদ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সরকারি–বেসরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য। সারাদেশে আইন–শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুই–শতাধিক যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাশকতা হয়েছে রাজধানীতে। মেট্রোরেলের স্টেশনে তাণ্ডব চালানো হয়েছে বর্ণনাতীত। যাত্রাবাড়ি, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী ও মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি নাশকতা চালানো হয়েছে। আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ছোট বড় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তবে এবারের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ধরন অন্যরকম। শিক্ষার্থীদের দাবির আড়ালে মূলত স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান বলেন, আন্দোলনের নামে চলমান নাশকতায় শিক্ষার্থীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। বিভিন্ন তথ্য, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘটনার হামলাকারীরা মধ্যবয়সী। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ‘তারা বিএনপি–জামায়াতের কর্মী’।
অন্যদিকে নরসিংদী কেন্দ্রীয় কারাগারে দুষ্কৃতিকারীদের হামলা ও নাশকতার সময় পালিয়ে গেছে আট শতাধিক আসামি। এর মধ্যে ৮ জন দুর্ধর্ষ জঙ্গি। এ ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। কারাগারের মতো সুরক্ষিত জায়গায় দুষ্কৃতকারীরা হামলা করার দুঃসাহস পেয়েছে এবং আট শতাধিক আসামিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। যদিও পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্য থেকে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এছাড়া লুট হয়ে যাওয়া ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘অপ্রত্যাশিত ও আচমকা’ উল্লেখ করে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের গ্রেপ্তার ও লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিসংযোগে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে মেট্রোরেল। এমন ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে, তা ঠিক করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের ক্ষতি অপূরণীয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে অল্প অল্প করে। তবে রাস্তা ও বিভিন্ন স্থাপনায় রয়েছে ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত চিত্র’–অগ্নিসংযোগের চিহ্ন। কোথাও কোথাও এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দফায় দফায় ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার মহাযজ্ঞ ও ক্ষতচিহ্নের চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি প্রদানে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন–উর–রশীদ। তিনি বলেন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে যারা অর্থ সাপ্লাই করেছে, যারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, পুলিশকে হত্যা করেছে এবং যারা মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, যারা অন্যদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, জানতে হবে তাদের উদ্দেশ্যটা কী! তিনি বলেন, ‘যারা নাশকতা করেছে, তাদের পরিচয় মিলেছে। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, ‘এই সহিংসতার নেপথ্যে শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বাইরে থেকেও চক্রান্তকারীরা ইন্ধন দিচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। ইন্ধন না পেলে এমন ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করা সম্ভব হতো না।’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের সহজে ছাড়া যাবে না।’
বাস্তবতা এমন, দেশের মানুষ কেবল শান্তি চায়। সাধারণ মানুষ এখন আর আন্দোলন দেখতে চায় না। চায় না ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। বলতে গেলে বর্তমানে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে মানুষের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধ করে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার।