দেশে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের হার বাড়ছে; ২০২২ সালে এ প্রক্রিয়ায় ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে, যেগুলোর ৮৪ শতাংশই হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২২ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) পরিচালিত এ সমীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়। সমীক্ষার জন্য দেশের ৩০ হাজার ৩৫৮টি বাড়ি নির্বাচন করা হয় এবং ৩০ হাজার ৭৮ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পাঁচ বছরের ব্যবধানে সি– সেকশনের মাধ্যমে শিশু জন্মহার ২০১৭ সালের ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৩২৪টি শিশুর জন্ম হয়েছে বাড়িতে। সরকারি হাসপাতালে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮টি, বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ২৫৫টি এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে ৬১ হাজার ৪৮৯টি শিশুর জন্ম হয়েছে।
এরমধ্যে ১৬ লাখ ৯ হাজার ১৫৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে; সবচেয়ে বেশি ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে (মোট সি–সেকশনের ৮৪ শতাংশ)। এছাড়া ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি শিশু সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ২২ হাজার ১৩৬টি শিশু সি–সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতি বছরেই সি–সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বাড়ছে। ২০১১ সালে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ২৪ শতাংশ, ২০১৭–১৮ সালে ৩৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল কেন্দ্রিক প্রসব বাড়ার কারণে সি–সেকশনের সংখ্যা বেড়েছে। বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় দরিদ্র নারীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, নারীদের ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় ধনীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গ্রহণের মাত্রা ছয় গুণ বেশি ছিল। ২০২২ সালে এ অনুপাত কমে দরিদ্রদের তুলনায় ধনীদের সেবা গ্রহণ দ্বিগুণে নেমে এসেছে।
সবশেষ সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ নারী অন্তত একবার একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর থেকে গর্ভকালীন বা এএনসি সেবা গ্রহণ করেছেন, যা ২০১৭ সালে ছিল ৮২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ধরনের নিয়মনীতি না থাকায় সি–সেকশন অস্ত্রোপচার বাড়ছে। এতে নারীদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।