মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক বলেছেন, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমবায় সংগঠনের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। দেশে অনেক সমবায় সমিতির সফলতা রয়েছে; এগুলো প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
গত শনিবার সকালে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ দুলাল মিঞা।
ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনীতি শক্তিশালী করতে তরুণ এবং নারীদের অধিক মাত্রায় সমবায়ে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ৩০ বছরের কম বয়সী। ২০২৪–এর জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই তরুণরাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তরুণরা তাদের আত্মপ্রত্যয় ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই তরুণ শক্তিকেই এখন আমাদের সমবায় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হবে। তরুণদের হতাশা ও বেকারত্বের অভিশাপ এই আন্দোলনে প্রতিফলিত হয়েছে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে সমবায়ের মাধ্যমে এই দেশকে এগিয়ে নিতে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই সুযোগ হাজার বছরেও আর আসবে না। সুতরাং এ বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একতাই সমবায় আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি, বিভাজন নয়। সমবায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে একত্রে কাজ করা। কিন্তু সমবায় সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় মামলা মোকদ্দমা আদালতে গিয়েছে। এসব মামলা উচ্চ আদালত এমনকি আপিল বিভাগেও গিয়েছে। মামলা–মোকদ্দমা করে বিভাজন সৃষ্টি কাম্য নয়। দুটি মানুষ একসাথে থাকলে মতবিরোধ থাকবে। প্রচলিত সমবায় আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে সেই বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। নীতিগত কারণে যে বিরোধ দুটি পক্ষের মধ্যে থাকে তা আলাপ–আলোচনা বা আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু স্বার্থের সংঘাত সমবায়ে হবে, এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সমবায় সমিতিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্য বা দ্বন্দ্বগুলো যখন আদালত পর্যন্ত গড়ায় তখনই সমবায় আন্দোলন ব্যর্থ হয়। সমবায় আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথের সকল প্রতিবন্ধকতাকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দূর করতে হবে।
তাঁরা বলেন, সমবায়কে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশে শতভাগ শিক্ষা বাস্তবায়ন এবং শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। বাংলাদেশেও সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে এই প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সমবায় কাঠামোকে সংস্কার করে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সকল সমবায় সমিতি এক হলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সমবায় সমিতি। দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। সমবায়ের গুরুত্ব সবসময় আছে ও ভবিষ্যতে থাকবে। সমবায় মানে একটি কাজ সকলে মিলে করা। দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলাবোধ, নারীদের উন্নয়ন, গ্রামীণ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে ঋণ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়ে থাকে সমবায়ের মাধ্যমে।
সমবায় মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় সকলে মিলে দেশের জন্য কাজ করবো। সমবায় আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক বলেন, নারীদেরও সমবায়ের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ও স্বাবলম্বী হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সেই সাথে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক, কারিগর ও নারীদের সম্পৃক্ত করলে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং জাতীয় উৎপাদনও বাড়বে। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে যে কেউ সমবায়ে যুক্ত হয়ে উৎপাদন, বিপণন, আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সমবায় সংগঠনগুলোকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাঁর কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমবায় কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে দেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে।








