দেশে শীতের ‘বিলুপ্তি ঘটতে পারে’ এ শতাব্দীতেই

| বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে আগামীতে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে এবং বর্ষায় আরও বেশি বৃষ্টি ঝরবে বলে সরকারের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ পরিস্থিতি হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর মধ্যেই দিনের তাপমাত্রা সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা বাড়বে শীতকালেও। সেক্ষেত্রে বাড়তে বাড়তে ২১০০ সালের মধ্যে এ ঋতুর বিলুপ্তির আশঙ্কাও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ জলবায়ু নামে গতকাল বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, যেখানে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়াকে ‘বাস্তবসম্মত’ প্রক্ষেপণ বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রীষ্মে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে, যার বেশির ভাগই ঘটবে বর্ষা মৌসুমের আগে, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে ২০১১ সাল থেকে যৌথ কাজ করছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়ের মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট। কাজ শুরুর পর এটি ছিল তাদের তৃতীয় প্রতিবেদন, যেখানে পাঁচটি ভিন্ন পরিস্থিতির বিষয়ে পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে শতাব্দীর বাকি সময়কে দুটি ভাগ করা করেছে। একটি ভাগের ব্যাপ্তি ২০৪১ থেকে ২০৭০ পর্যন্ত; আরেকটি বিস্তৃত ২০৭১ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত।

তাপপ্রবাহ: অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বজলুর রশিদ, যিনি প্রতিবেদনটি তৈরির ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষা মৌসুমের আগের তিন মাসে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ২০ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। তিনি বলেন, ১৯৮৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যকার সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এই হার ৭৫ শতাংশ বেশি। খবর বিডিনিউজের।

একই সময়কালের তুলনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহের হার তিন গুণ বেড়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগের ৯০ দিনের মধ্যে ৭০ দিনই তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

শৈত্যপ্রবাহ : নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শৈত্য প্রবাহ বেশির ভাগ সময় দেশের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দেখা দিতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে শীত হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃষ্টিপাত: বজলুর রশিদ বলেন, গবেষণার সব পদ্ধতিতেই বৃষ্টি বৃদ্ধির আভাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তার ৭১ শতাংশই ঝরে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১৮ মিলিমিটার বেড়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ বৃষ্টি হবে উত্তরপূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায়। ২১০০ সালের মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাবে প্রায় ২৫৫ মিলিমিটার। ওই সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরবে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোজ গার্ডেন কিনে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকা ক্ষতি
পরবর্তী নিবন্ধমোহাম্মদ জমিরের ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ