দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ে গত সোমবার পাওয়া গেছে বিরল প্রজাতির ‘রেড কোরাল কুকরি’ সাপ। প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এই প্রথম এবং পুরো পৃথিবীতেই মাত্র ২০-২২ বারের মত দেখা গেছে এই সাপ। সেটি বর্তমানে রাজশাহী স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছে। তবে প্রাণ ঝুঁকিমুক্ত কিনা আগামী ৭২ ঘণ্টার আগে তা বলা যাচ্ছে না। সুস্থ হলে সাপটি উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে আনা হবে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল এই সাপ। মূলত ভারতের হিমালয় অঞ্চলের সাপ এটি, কিন্তু সাধারণত ভারতের উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই সাপের দেখা মেলে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেছেন, এই সাপ সাধারণত লালচে উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। সাপটি মৃদু বিষধর। এই প্রজাতির সাপ নিশাচর এবং বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই থাকে। যে সাপটি পাওয়া গেছে, তার দৈর্ঘ্য দেখে বোঝা যায় সেটি একটি পূর্ণ বয়স্ক সাপ। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পঞ্চগ ড়ের আশেপাশের এলাকায় এ জাতের আরো সাপ থাকতে পারে। সাধারণত এটি খুব বেশি লম্বা হয় না, মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। সাপের প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওলিগোডন খেরিনসিস।
সোমবার সকালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার এক বাজারের কাছে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক্সক্যাভাটর যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটছিলেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। হঠাৎই এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে কয়েকটি সাপ। ভেতরে আরো সাপ থাকতে পারে এমন আশংকা থেকে তারা দ্রুত সেখানকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মী ও সাপ উদ্ধারকারী মো. শহীদুল ইসলামকে খবর দেয়া হয়। তিনি এসে মোট আটটি সাপ উদ্ধার করেন, যার একটি ছিল রেড কোরাল কুকরি সাপ। বোদা উপজেলার যে জায়গায় রেড কোরাল কুকরি সাপটি পাওয়া গেছে, সেটি বেশ প্রত্যন্ত একটি গ্রাম।
শহীদুল ইসলাম বলেন, এক্সক্যাভাটরের আঘাতে পেটের কাছে আঘাত লেগে সাপটির নাড়ীভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল। তবে সাপটি এখন চিকিৎসাধীন আছে। সুস্থ হলে সেটিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হবে। তবে সাপটির প্রাণের শঙ্কা এখনো কাটেনি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি বলেন, সেটি এখনো খুবই জটিল অবস্থায় আছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে, আমরা এটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যান্ডেজ করলেই সাপটি নড়াচড়া করে সেটি খুলে ফেলছে, যে কারণে তার চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় লাগছে। সাপটির প্রাণ ঝুঁকিমুক্ত কিনা আগামী ৭২ ঘণ্টার আগে তা বলা যাবেনা বলে জানিয়েছেন তিনি।












